বিরোধীদলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বহু ত্যাগ করে নতুনভাবে আন্দোলন চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে। জামায়াতও এর মধ্যে নিজেদের শক্তি জানান দিচ্ছে। এর মধ্যে হাসিনা নির্বাচনকে আরো বেশি তার করায়ত্বে নিয়ে এসেছে।
প্রতিষ্ঠাকাল বাংলাদেশে ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে। ভোটার তালিকা থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ধারণা হয় এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করতো নির্বাচন কমিশন। বাস্তবে স্বাধীন না হলেও নথিপত্রে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান।
২০২২ সালের অক্টোবরে হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতীয় পরিচয় পত্রের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে নিয়ে নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা ভোটার তালিকাও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। পাসপোর্টের মতো করে তারা এখন জনগণের এনআইডি কার্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা/ আটকে রাখা ইত্যাদি অপকৌশলের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি করবে। হাসিনা স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার অনেক আগেই কেড়ে নিয়েছে। এখন স্বাধীনভাবে ভোটার হওয়ার অধিকারও আর থাকবে না।
২০২১ সালে সরকার এনআইডি কার্যক্রম ইসির হাত থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তখনকার কেএম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এর বিরোধিতা করে। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি বিরোধিতা না করে অবাধে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে এনআইডি’র কর্তৃত্ব চলে যাচ্ছে। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পায়। গতকাল অর্থাৎ ১২ জুন ২০২৩ তা চূড়ান্ত অনুমোদন পেল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, এই আইনের আওতায় এখন আমাদের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে পরিচালিত হবে। তাদের এ-সংক্রান্ত একটি অফিস থাকবে। অফিসে একজন নিবন্ধক থাকবেন এবং নিবন্ধকের মাধ্যমে এই কাজটি করা হবে।
বাংলাদেশে ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করা হয়। তখন থেকে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে আসছে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিও পায়। পরে স্মার্ট এনআইডিও ইসির ব্যবস্থাপনায় হয়। এখন নানা ধরনের সেবা পেতে নাগরিকদের এনআইডি প্রয়োজন হয়।
এই এনআইডি যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীনে যাবে তখন একজন মানুষকে হয়রানি করা স্বৈরাচারী সরকারের জন্য খুবই সহজ হবে। আশংকা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে বিভিন্ন মামলার অজুহাতে মৌলিক মানবিক ও সংবিধার কর্তৃক অধিকার হরন করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। যেভাবে এখন হায়রানি করে পাসপোর্ট নিয়ে।
Discussion about this post