আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু বলেছেন, প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় তারা বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান। মঙ্গলবার ঢাকায় ১৪-দলীয় জোটের একটি সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করার পর থেকেই দেশ জুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিএনপি বহুদিন ধরে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। এই সংকট নিরসনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতার বিষয়ে কোন পক্ষ থেকেই এর আগে কিছু বলা হয়নি। যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছিল, যদিও শেষ পর্যন্ত তাতে কোন সমাধান আসেনি।
৬ জুন মঙ্গলবার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ১৪ দলের একটি সমাবেশ হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘’জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি আসুক। আমরা বিএনপির সঙ্গে মুখোমুখি বসে দেখতে চাই, কোথায় সমস্যা, সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা কোথায় এবং কীভাবে সেটা নিরসন করা যায়। এটা আলোচনার মধ্য দিয়েই সুরাহা হতে পারে, অন্য কোন পথে নয়।‘’
পরদিন বুধবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন করলেও তিনিও বলেছেন, ‘’আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব, এটা নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করব, বিগত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী সংলাপের আহ্বান করেছিলেন। জাতিসংঘ কেন মধ্যস্থতা করতে যাবে? আমাদের দেশে এমন কোনও রাজনৈতিক সংকট হয়নি যে জাতিসংঘকে এখানে ইন্টারফেয়ার করতে হবে। জাতিসংঘ মধ্যস্থতা করবে এই রকম কোনও সংকট স্বাধীন বাংলাদেশ হয়নি।‘’
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘’আমার মনে হয় আমাদের গণতন্ত্র এখন অনেক পরিপূর্ণ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ধারা এগিয়ে চলছে। কাজেই এখানে বাইরের কোনও মধ্যস্থতা, বাইরের কোনও হস্তক্ষেপ তো দরকার নাই। আমাদের নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করব। সময় বলে দেবে কখন কী হবে। আপাতত আলাপ-আলোচনার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।‘’
সংলাপ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মীর্যা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এরকম কোন বিষয় নিয়ে তো আমরা এখন ভাবছি না। আমাদের একটাই দাবি, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, সেটার জন্যই আমরা আন্দোলন করছি। আর আমির হোসেন আমু সাহেব যে কথা বলেছেন, সেটা তার নিজের ব্যক্তিগত বক্তব্য নাকি দলের বক্তব্য, তাতো আমরা এখনো জানি না। কোন আলোচনা করতে হলে সুনির্দিষ্ট এবং আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব ছাড়া আমি এরকম বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।‘’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কেন্দ্রিক অচলাবস্থা কাটাতে ঢাকায় তিন দফায় এসেছিলেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। প্রথমবার তিনি ঢাকায় আসেন ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। এরপর ২০১৩ সালের মে মাসে এবং ডিসেম্বর মাসে আবার ঢাকায় আসেন। শেষ সফরে ছয়দিনে তারানকো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামের প্রতিনিধি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নাগরিক সমাজ, ঢাকায় কর্মরত কূটনীতিকদের সাথে সংলাপে অংশ নেন।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ডিসেম্বর মাসে ঢাকা ছাড়ার সময় তারানকো সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁর এই সফরের লক্ষ্য ছিল উভয় দলকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা। ‘’আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এ দেশের রাজনীতিবিদদের। সমাধানটাও খুঁজে নিতে হবে তাঁদের,’’ তিনি বলেছিলেন। ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে মি. ফার্নান্দেজ-তারানকোর উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দুটি প্রতিনিধি দল আলোচনায় বসে।
ঐ আলোচনার নামে বিএনপিকে আন্দোলন থেকে সরিয়ে আনে সরকার। একইসাথে তাদের নড়বড়ে অবস্থাকেও শক্ত করতে সক্ষম হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলো, এটা সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। আমরা সমঝোতার ভিত্তিতে আরেকটি নির্বাচন দেব। এভাবে তারা বিএনপিকে সংলাপের ফাঁদে ফেলে দেয়। সংলাপে এসে বিএনপি আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে দেয়। ফলে শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা মজবুত করে ও দীর্ঘস্থায়ী স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করে।
বিএনপি যদি সংলাপের নামে আন্দোলনের পথ থেকে সরে দাঁড়ায় তবে তা হবে তাদের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপ এটা বিএনপি’র জন্য আওয়ামীলীগের ফাতা ফাঁদ।
Discussion about this post