অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি দশের বিভিন্ন জায়গায় মুজিববর্ষে দেয়া শেখ হাসিনার উপহার নামে কয়েকটি ঘর বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ায় আবার সমালোচনায় জন্ম নিয়েছে।
গেলো বছর কথিত মুজিববর্ষের নামে দেশের কোটি কোটি টাকা নষ্ট করে এবার সারাদেশে অসহায়-গরিব ও ভূমিহীন পরিবারকে সরকারি জমিতে ঘর করে দেয়ার নামে নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। ক্রমান্বয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু প্রকল্প শুরু থেকেই যেন সমালোচনা পিছে ছাড়ছেনা। জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, গরিব মানুষকে সরকার ঘর তৈরি করে দিচ্ছে এটা নিশ্চয় একটা ভাল কাজ। প্রশ্ন হল-এই প্রকল্পের আড়ালে হচ্ছেটা কি? এই প্রকল্পের টাকা কার পকেটে যাচ্ছে?
দেখা গেছে, সরকারের এই প্রকল্পে প্রথমেই অভিযোগ উঠে গরিব মানুষদেরকে ঘর দেয়ার কথা বলে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার।বিভিন্ন জায়গায় অসহায় মানুষ ঘর পাওয়ার জন্য হাস-মুরগি ও ভিক্ষার টাকা খরচ করে টাকা দিয়েছে। আবার অনেকে টাকা দিয়েও ঘর পায়নি। খোজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মেম্বার-চেয়ারম্যানদেরকে ঘুষ দিয়ে ঘর পেয়েছে এমন লোকের সংখ্যা সারাদেশে অনেক। ঘর হারানোর ভয়ে অনেকেই ঘুষ দেয়ার কথা প্রকাশ করেনি। টাকা দিয়েও যারা ঘর পায়নি শুধু তাদেরটা প্রকাশ পাচ্ছে।
এরপর, এই প্রকল্পে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হল-নিম্ন মানের রড-সিমেন্ট ও বালি দিয়ে ঘর নির্মাণ। জানা গেছে, নির্মাণ সামগ্রী এতটাই নিম্ন মানের দিচ্ছে যে, ঘর প্রতি সরকার যে টাকা বরাদ্দ দিয়েছে তার অর্ধেকও খরচ হচ্ছে না। বাকী টাকা মেরে দিচ্ছে ঠিকাদার ও আওয়ামী লীগের নেতারা। নিম্ন মানের ইট-বালু আর সিমেন্ট দিয়ে ঘর বানানোর কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই এসব ঘর ধসে পড়ছে। কিছু জায়গায় আবার বাসিন্দারা উঠার আগেই ঘর ভেঙ্গে পড়ছে।
জানা গেছে, বগুড়ার শেরপুরে বসবাস শুরুর আগেই ভেঙে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্যোগ সহনীয় ঘর। বর্ষা মৌসুমের টানা দুই দিনের বৃষ্টিতেই ভূমিহীনদের দেওয়া বাড়ির একপাশের মাটি খালে ধসে গেছে। এতে করে বেশ কয়েকটি ঘর ভেঙে পড়েছে। ফলে সুবিধাভোগীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। তাই প্রকল্পের বাকি ঘরগুলো ঠিক থাকলেও এসব ঘরে কেউই থাকছেন না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তড়িঘড়ি করে খালের কিনারায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সেই খাল থেকেই মাটি কেটে বাড়ির চারপাশে মাটি দেওয়া হয়। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি খালে ধসে যাওয়ায় ঘরগুলোর এই হাল হয়েছে। আশ্রয়ণ
এছাড়া, গোপালগঞ্জে বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে প্রধামন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুটি ঘর। ঘরের বাসিন্দা মো. ইব্রাহীম জানান, ঘটনার সময় তার স্ত্রী-সন্তান ঘরে ছিল না। তিনিও ছিলেন কাজে। সেখান থেকে ফিরে দেখেন বারান্দাসহ ঘরের অনেকাংশ ভেঙে পড়েছে। প্রকল্পের ঘর পাওয়া আরেক বাসিন্দা মাহফুজা বলেন, ওইদিন বিকেলের বৃষ্টিতে বালু সরে গিয়ে আমার ঘরেরও অনেকটা অংশ ভেঙে পড়েছে।
ওই এলাকার ঘর পাওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, অন্য ঘরগুলোও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পাঁচ মাস আগে তারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। এরই মধ্যে অনেক ঘরেরই দেওয়াল ও মেঝে থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই টিনের চালার বিভিন্ন জায়গা দিয়ে পানি ভেতরে পড়ছে। জানালা-দরজাও নড়বড়ে।
শুধু এবার বৃষ্টির মৌসুমে নয় চলতি বছরের শুরুতে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী ৭নং ওয়ার্ডের মধ্য চুকাইবাড়ী রামপুরা গ্রামেও নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়ে কয়েকটি ঘর। এছাড়া গেলো মার্চ মাসে তালতলী উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে রাখাইনদের জন্য ১১০টি ঘর উপহার দেওয়া হয়। বেশিরভাগ ঘরই এখন ভেঙে ভেঙে পড়ছে বলে অভিযোগ করে স্থানীয়রা।
Discussion about this post