অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিগত নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্রদখল, ব্যালটবক্র ছিনতাই, জালভোট প্রদান ও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে সহযোগিতা করায় পুলিশ লীগের সদস্যদেরকে পদক দেবেন শেখ হাসিনা। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণায় থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। তিনটি নির্বাচনে যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছিলেন তারাই পাবে হাসিনার এই পদক।
দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য তৎকালীন বিজিবি প্রধান আজিজ আহমেদকে পরবর্তীতে পুরুষ্কার হিসেবে সেনাপ্রধান করেছিল শেখ হাসিনা। এভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে সহযোগিতা করায় অনেক সেনা অফিসার, র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে গণহারে পদোন্নতি দিয়েছিল শেখ হাসিনা। পুলিশের বর্তমান আইজিপি বেনজির আহমদ ভোটডাকাতির কোটায় পুলিশ প্রধান হয়েছে। এবার ভোটডাকাতিতে জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে পুরুষ্কার দেবে হাসিনা।
দেখা গেছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তৎকালীন সেনাশাসক মইনুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়নে। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের নির্দেশেই সব হয়েছিল। নির্বাচনের ফলাফল কি হবে সেটা আগেই নির্ধারণ করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ কত আসন পেয়ে বিজয়ী হবে, বিএনপি ও জামায়াত কত আসন পাবে সেটা চূড়ান্ত হয়েছিল নির্বাচনের আগেই। ওই নির্বাচনে পুলিশ সদস্যরা সেনাশাসকের নির্দেশেই ভোটের ফল পাল্টে দিয়েছিল। জনগণ বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট দিলেও রাতের বেলা বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল নৌকার প্রার্থীকে। এভাবেই কথিত বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগ।
তারপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। আওয়ামী লীগের ১৫৪ জন এমপি বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। নির্বাচনের দিন বাকীগুলোতেও সাধারণ মানুষ ভোট দিতে যায়নি। বিজিবি-র্যাব আর পুলিশের পাহারায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকায় সিল মেরে দেখিয়েছিল জনগণ ভোট দিয়েছে। ওই নির্বাচনের সময় সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদেরকে হত্যা, গ্রেফতার নির্যাতন চালিয়ে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল পুলিশ লীগের সদস্যরা। সোজা কথা বলা যায়-পুলিশের সহযোগিতাই ওই সময় অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের সুযোগ পায় শেখ হাসিনা।
এরপর, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে যে কেলেংকারির ঘটনা শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী ঘটিয়েছিল সেটা মানুষ আজ ভুলেনি। সারাদেশের ভোটের আগের রাতেই প্রতিটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের পাহারায় নৌকায় সিল মেরেছে। এমনকি কোনো জায়গায় পুলিশ সদস্যরা নিজেরাই সিল মেরেছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে সেদিন পুলিশের ভুমিকা ছিল স্মরণীয়।
দেখা যাচ্ছে-বিগত তিনটি নির্বাচনেই ভোটডাকাতি, কেন্দ্রদখল, জালভোট প্রদান, বিরোধীদলের ভোটারদেরকে হুমকি-ধমকি দিয়ে বাড়িতে আটকে রেখে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে পুলিশ।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন ক্ষমতায় বসানোর জন্য পুলিশকে পদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখলাম পুলিশকে নির্বাচনী পদক দিচ্ছে। ২০১৮, ২০১৪ ও ২০০৮ সালের জন্য। এর আগে কোনো দিন শুনিনি এই পৃথিবীতে যে, নির্বাচন করার জন্য পুলিশকে পদক দেওয়া হয়। ‘পুলিশকে নির্বাচনী পদক একটাই কারণ যে, তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছে। সেজন্য এসপি সাহেবরা বলেন, দেশটা আমরা চালাই। পুলিশের কনস্টেবল বলে মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ। ’
Discussion about this post