অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাজধানীতে বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁর বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে অর্থ লুটপাটের বিশেষ চক্র। রাজধানীবাসীকে জিম্মি করে বছরে অন্তত ৪৫০ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য করছেন ছাত্রলীগসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। এঁদের ওপর দুই সিটি করপোরেশনের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে। এ জন্য নগরবাসীকে আলাদা কোনো টাকা দিতে হয় না।
২০১৯ সালের ২২ এ অক্টোবরের প্রথম আলোর পাতায় এমন একটি প্রতিবেদন উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয় রাজধানীতে প্রতিটি বাসা বা ফ্ল্যাটের জন্য সিটি করপোরেশন–নির্ধারিত মাসিক ৩০ টাকার অনেক গুণ বেশি আদায় করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রসিদ দেন না। সংগ্রহ করা টাকার কোনো অংশ সিটি করপোরেশন পায় না। লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় জোর খাটিয়ে ময়লা সংগ্রহের কাজ এবং এলাকা দখলের মতো ঘটনাও ঘটছে।
ঢাকার দুই সিটিতে মোট ওয়ার্ড ১২৯টি। এগুলোর মধ্যে ৯৩টি ওয়ার্ড আগে ছিল। ৩৬টি ওয়ার্ড ইতিমধ্যে যুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি প্রথম আলোর চারজন প্রতিবেদক পুরোনো ৯৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৪টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় ১২ দিন ঘুরে ময়লা–বাণিজ্যের চিত্র দেখেছেন।
তবে ঘটনার দুবছর পার হলেও এখনও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারিনি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনও প্রতিবছর গৃহকরের ৩ শতাংশ নেয় পরিচ্ছন্নতা বাবদ। গত অর্থবছরে বাসিন্দাদের কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ১৫০ কোটি টাকার বেশি পরিচ্ছন্নতা কর আদায় করেছে। অথচ তারা বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ না করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের লুটপাটের সুযোগ করে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে নতুন বাজেট হওয়ার পরে আবারও সমালোচনায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগনেতারা।
সম্প্রতি রাজধানীর শুক্রাবাদে ময়লার বিল নিতে গিয়ে একজন বৃদ্ধার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে কলাবাগান থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সিদ্দিকী রুবেল। বর্তমানে শুক্রাবাদ এলাকার ‘ময়লা-বাণিজ্য’ তাঁরই নিয়ন্ত্রণে।ভুক্তভোগী রহিমা বেগম (৭৩) বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন। ছাত্রলীগ নেতা রুবেল আরেক বাসার ময়লার টাকা আনতে গিয়ে রহিমার বাসার দরজায় জোরে লাথি মারে। মাথায় দরজা লেগে রহিমার মাথা ফেটে যায়।
এ ঘটনায় আবার সামনে এসেছে ময়লা বাণিজ্য। ১৯৮০–র দশকের শেষ দিকে কলাবাগান এলাকায় প্রথম বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। পরে পুরো রাজধানীতে একই রকম ব্যবস্থা চালু হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বর্জ্য সংগ্রহের নিয়ন্ত্রণ নেন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন আর কী বাকী আছে? এমন কিছু কি আর আছে যেটা শেখ হাসিনার নেতাকর্মীরা করেনি। মানুষ হত্যা, গুম-অপহরণ, ছিনতাই, ছাগরচুরি, ডাকাতি, জমিদখল, টেন্ডার ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষাঙ্গনের হল দখল, সিট বাণিজ্য, প্রশ্ন ফাঁস, মারামারি, ধর্ষণ, প্রকাশ্যে দিবালোকে কুপিয়ে মানুষ হত্যাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যে তারা করেনি। এমনকি বিদেশে টাকা পাচারেও তাদের জুড়ি নেই।
Discussion about this post