অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যারা সব কিছুই করতে পারে। এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করতে পারে না। নিজেদের স্বার্থে তারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে। গুলি করে হত্যা করতে পারে নিরপরাধ মানুষকে। এমনকি অন্যকে ফাঁসাতে তারা মানুষের বাড়িঘর পর্যন্ত আগুনে পুড়িয়ে দিতে পারে। যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হল সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ে হিন্দুদের বাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট ও আগুনের ঘটনা।
হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে দেয়া এক হিন্দু যুবকের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে হাতিয়ার বানিয়ে আওয়ামী নরপশুরা হিন্দু অধ্যাষিত একটি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। নির্যাতন করেছে নারী ও শিশুদেরকেও।
সুনামগঞ্জের শাল্লার ওই গ্রামে আগুন দিয়ে তারা প্রথম প্রচার করেছে হেফাজতের উস্কানিতে গ্রামবাসী এঘটনা ঘটিয়েছে। সরকার দলীয় গণমাধ্যমগুলোও এনিয়ে হেফাজতের বিরুদ্ধে লাগাতার বিষোদগার করে যাচ্ছে। ইসলাম বিদ্বেষী বামপন্থী সংগঠন গুলো আবার শাহবাগে দাড়িয়ে হেফাজত আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর গ্রেফতার দাবি করছে। কিন্তু আওয়ামী থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার সঙ্গে মামুনুল হকবিরোধী ফেসবুক স্ট্যাটাসের কোনো সম্পর্ক নেই বরং জলমহাল নিয়ে পূর্ববিরোধের জের ধরে ঝুমন দাশ আপনের আপত্তিকর ফেসবুক স্ট্যাটাসকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেই এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী অসীম চক্রবর্তী ও দীপক দাস জানান, হামলার মূল নেতৃত্বে ছিলেন দিরাই উপজেলার নাচনী গ্রামের বর্তমান ইউপি সদস্য সরমঙ্গল ইউনিয়ন যুবলীগের ওয়ার্ড সভাপতি শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ও একই গ্রামের পক্কন মিয়া।
তারা জানান, স্বাধীন মেম্বার ও পক্কন মিয়ার নেতৃত্বে মাইকে ঘোষণা দিয়ে তারা লোকজনকে সংগঠিত করে গ্রামে তান্ডব চালায়।
জানা গেছে, নাচনী গ্রামের স্বাধীন মেম্বার স্থানীয় বরাম হাওরের কুচাখাই বিলের ইজারাদার। জলমহাল নিয়ে স্বাধীনের সঙ্গে কিছুদিন ধরে ফেসবুকে কটূক্তির দায়ে গ্রেফতারকৃত যুবক ঝুমন দাশসহ নোয়াগাঁওয়ের কিছু লোকের বিরোধ চলছিল।
জলমহালে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণ ও জলমহালের পানি শুকানোর ফলে চাষাবাদে সেচের পানির সংকটের ব্যাপারে নোয়াগাঁওয়ের হরিপদ দাশ ও মুক্তিযোদ্ধা জগদীশ দন্দ্র দাস শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্বাধীন মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ জানুয়ারি সরেজমিন কুচাখাই বিলে গিয়ে অবৈধ শ্যালোমেশিনসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ জব্দ করে জলমহালের পানি ছেড়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মোক্তাদির হোসেন।
এ সময় বাঁধ কাটার কাজ করেন নোয়াগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা অকিল চন্দ্র দাসের ছেলে অমর চন্দ্র দাস ও পানি ছেড়ে দেয়ার দৃশ্য ফেসবুকে প্রচার করেন একই গ্রামের ঝুমন দাশ।
এ ঘটনায় স্বাধীন মেম্বার নোয়াগাঁও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। ঝুমন দাসের এ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তার নিজস্ব লোকদের দিয়ে বুধবার নোয়াগাঁও গ্রামে ভাংচুর ও লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন গ্রামের অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
নোয়াগাঁও গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত শৈলেন চন্দ্র দাশ বলেন, স্বাধীন ও পক্কনের নেতৃত্বে আমাদের ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। তারা আমার ঘরের টাকা-পয়সা ও অলঙ্কার লুট করে নিয়ে গেছে। স্বাধীনের সঙ্গে আমাদের গ্রামবাসীর ঝামেলা চলে আসছিল। সে বরাম হাওরের কুচাখাই বিল সেচতে চায়, আর আমরা গ্রামবাসী বাধা দেই। বিল সেচার কারণে জমিতে পানি দেয়া যায় না। পানির অভাবে জমি ও ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা ইউএনও সাহেবের কাজে অভিযোগ করেছি। অভিযোগকারী ছিলেন আমার কাকা হরিপদ দাশ। এ কারণেই হরিপদ বাবুর আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘর বেশি ক্ষতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অথচ ঘটনার কোনো প্রকার তদন্ত না করেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের-হেফাজতে ইসলামের ওপর দোষ চাপিয়েছেন। একই বক্তব্য দিয়েছেন হাছান মাহমুদও।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করেন, সুনামগঞ্জের ঘটনা প্রমাণ করে অতীতে বাংলাদেশে যেসব জাযগায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে সবই করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। ভারতের দাদাদের কাছ থেকে সুবিধা নিতেই তারা বিভিন্ন জাযগায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা করে বিএনপি-জামায়াত ও আলেম ওলামাদের উপর দোষ চাপিয়েছে। এবার তারা হেফাজতে ইসলামকে ফাঁসাতেই সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর করেছে।
Discussion about this post