অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ থেকে ভ্যাক্সিনের নামে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে হঠাৎ করে কোন কারন না জানিয়ে ভ্যাকসিন রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। শুধু বাংলাদেশ নয় এই তালিকায় রয়েছে অনেক দরিদ্র রাষ্ট্রও।
জানা যায়, ভারত সরকারের নির্দেশে ভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটকে আগামী কয়েক মাসের জন্য করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিনের রফতানি বন্ধ রাখবে । এই নিষেধাজ্ঞা কে ভারতের ছলচাতুরি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদর পুনাওয়াল্লা বলেন, ‘রোববার ভারতীয় নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু শর্ত হলো, ঝুঁকিতে থাকা ভারতীয় জনগণের জন্য ডোজ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য রফতানি করতে পারবে না সিরাম ইন্সটিটিউট।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে শুধুমাত্র ভারতীয় সরকারের কাছে ভ্যাকসিন হস্তান্তর করতে পারব।’
ভারত সরকারের এমন অচারণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিশ্লেষকরা।তারা বলছেন, ভারত সরকার করোনা টিকা নিয়েও এক ধরনের ছলচাতুরি করছেন। তারা বাংলাদেশকে কখনও বন্ধু ভাবেননা। ভারত মূলত বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন খেলায় মেতেছে। চীনের সথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে ভারত মেনে নিতে পারছেনা। তাই তার পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে মন পেতে চাচ্ছেন।
তারা বলছেন, বাংলাদেশকে চীন থেকে মুখ ফেরাতে পেঁয়াজ বন্ধ করে প্রথম হুশিয়ারি দেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু যখন সেটা পারলো না তখন তেলা মাথায় তেল দেয়া শুরু করলো। সত্যি কথাটা প্রকাশ করে দিলেন ভারতের নতুন হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।
দোরাইস্বামী বলেছিলেন, আওয়ামী লীগেই ভারতের বন্ধু। এরপর করোনা টিকা নিয়েও নতুন ছলচাতুরি করছে। অন্যদিকে গত কয়েকদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক উঞ্চ। টিকা পেতে সমস্যা হবে না। আবার কিছুই আনতে পারছেন না। শুধু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে যাচ্ছেন।
তারা প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলাদেশ সরাসরি ভ্যাক্সিন কেনার সুযোগ থাকলেও ভারত থেকে ভ্যাক্সিন কিনতে হবে কেন? এখন টাকা নেওয়ার পর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ভ্যাক্সিন পেতে গেলে এখন ভোগান্তি। শুধু তাই না সরকার নিজ থেকে না কেনার সুযোগ ছিলো কিন্তু সেটা না করে দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো কোম্পানীর মাধ্যমে কিনছে। যার মাধ্যমে সরকার ইতিপূর্বে শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের নামে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
সচেতন মহল বলছেন, সরাসরি কম দামে কেনার সুযোগ থাকার পরেও সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেয় ঠিক হয়নি। দরিদ্র দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দামে হয়তো বাংলাদেশকে প্রতিটি টিকা পরিশোধ করতে হতো না। আর কম দামে বাংলাদেশ পেতে পারত সরাসরি ওই কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে পারলে। কিন্তু তা না করে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের আড়ালে এসব দরবেশদের লুটপাটের সুযোগ করে দেয় হচ্ছে। দেশ কি তাহলে এসব দরবেশদের কথায় চলে। তবে ভারতের ছলচাতরিতে এবার দরবেশদেরও একটু টনক নড়বে বলে মনে করছেন তারা।
অনেকেই আবার বলছেন, করোনার টিকা মানুষের জীবন-মরণের সাথে সম্পর্ক। এখন তারা এটা রপ্তানিও নিষিদ্ধ করলো কেন? বন্ধুরা আমাদের সাথে এত রসিকতা করছে কেন? দেখা যাবে-বাংলাদেশ যখন অন্য আরেকটি দেশের সাথে ভ্যাকসিন আনার চুক্তি করবে-ঠিক তখনই ভারত আবার রপ্তানির ঘোষণা দেবে।
এদিকে চলতি জানুয়ারিতেই ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা জানিয়েছিল দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে জন্য ছয় শ’ কোটি টাকা ভারতকে পাঠানোও হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ না এই উদ্যোগের আওতায় প্রথম ধাপের ৬ মাসের প্রতি মাসে বাংলাদেশকে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা ছিল সিরামের। তবে ভারতের এই হঠাৎ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়াকে বিলম্বিত করবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর অক্সফোর্ড উৎপাদিত ‘কোভিডশিল্ড’ ভ্যাকসিনের ৩ কোটি ডোজ পেতে সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছিল বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এই উদ্যোগের আওতায় প্রথম ধাপের ৬ মাসের প্রতি মাসে বাংলাদেশকে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন দেয়ার কথা ছিল সিরামের। বাংলাদেশ সরকার সরাসরি না কিনে ভারতের ভারত থেকে ভ্যাকসিন চড়া মুল্যে কেনার জন্য চুক্তি করে সালমান এফ রহমানের কোম্পানী বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকেলস। তা নিয়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম নেই।