অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মহামারি করোনায় যখন দেশের মৃ্ত্যুর মিছিল চলছে, অজানা আতঙ্কে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ রাখা হয়েছে তখনও থেমে নেই ছাত্রলীগের নির্মমতা। এই ক্যাম্পাস বন্ধকালীন সময়ও এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে গণধর্ষণের মত ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন ধর্ষককে গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ।
জানা যায়, দক্ষিণ সুরমার নবদম্পতি শুক্রবার বিকালে প্রাইভেটকারে করে এমসি কলেজে বেড়াতে যান। বিকালে এমসি কলেজের ছাত্রলীগের ৬ জন নেতাকর্মী স্বামী-স্ত্রীকে ধরে ছাত্রাবাসে নিয়ে প্রথমে মারধর করেন। পরে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেন। ছাত্রলীগ নেতাদের প্রত্যেকেই ছাত্রাবাসে থাকেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা কালীন কিভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজ ছাত্রাবাসে থাকতে পারে?
স্থানীয় সূত্র বলছে, এইবার প্রথম নয় ক্যাম্পাস চলা কালীনও বিভিন্ন সময় ছাত্রাবাসে ডেকে নিয়ে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করে তারা। এছাড়া ছাত্রাবাসে আটকে রেখে অভিভাবকদের কাছে বড় মুক্তিপনের জন্য অঙ্কের চাঁদা আদায় করে। শুধু তাই নয় আধিপত্য বিস্তার, খুনসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে তারা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাসে আধিপত্ব বিস্তার ও হল দখলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে আসছে ছাত্রলীগ। ২০১০ সালে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ব্যাপক হাঙ্গামার সৃষ্টি করে ছাত্রলীগ। এ সময় ছাত্রাবাসের ২৫টি কক্ষে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। ছাত্রলীগের এই হাঙ্গামায় তৎকালীন এমসি কলেজের ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ছয়জন আহত হন।
এদিকে এই প্রতিবাদের পর ছাত্রাবাস আবারও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কতৃপক্ষ। মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে। শনিবার শাহপরান থানার এসআই মিল্টন সরকার বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
এর আগে ভোররাতে সাইফুর রহমানের কক্ষে অভিযান চালিয়ে একটি পাইপগানসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
শাহপরাণ থানার ওসি কাইয়ুম চৌধুরী জানান, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় যে ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছ তাদের মধ্যে সাইফুর রহমান নামে একজনের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার ভোর রাতে ওই ছাত্রাবাসে তার কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদা, একটি ছুরি ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাস। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনার প্রতিবাদ ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার দুপুরে ক্যাম্পাসসংলগ্ন সিলেট-তামাবিল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এসময় তারা ধর্ষণকারীদের বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ থাকার পরেও কর্তৃপক্ষ কীভাবে ছাত্রাবাস খোলা রাখেন। কর্তৃপক্ষের অবগত থাকার পরেও কেন ছাত্রাবাস বন্ধ করে দেয়া হল না। যে কারণে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠে কলঙ্কের দাগ লেগেছে বলে মনে করেন তারা।
এসময় শিক্ষার্থীরা গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন। অন্যথায় তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে হুশিয়ারি দেন। আন্দোলন চলাকালে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
এদিকে ধর্ষকদের গ্রেফতারের তৎপরতা না থকলেও বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে ছাত্রাবাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ধর্ষকদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তারা বরং বিক্ষোভ ঠেকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আরো পড়ুন:
এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে আগুন দেয় ছাত্রলীগ: তদন্ত প্রতিবেদন
বন্ধ ছাত্রাবাসে ‘গণধর্ষণ’ ফের বন্ধের নির্দেশ!