অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় আকিজ গ্রুপের হাসপাতাল নির্মাণের কাজে বাধা দিয়েছেন আওয়ামী কাউন্সিলর ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
আজ শনিবার বেলা একটার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী কাউন্সিলর শফিউল্লাহ শফি নেতৃত্বে শ’ দুয়েক লোক এসে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়। তিনি তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিল্প এলাকার ১৮৪ নম্বর প্লটে নির্মাণাধীন হাসপাতালের লোকজন আসার পর সেখানে এসে চাঁদা দাবি করে আওয়ামী সভাপতি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। পরে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাদের কাজ বন্ধ করে দেয়। এ সময় তাদের বাধার মুখে হাসপাতালের জন্য সামগ্রী আনা ট্রাক আর ভেতরে ঢুকতে পারেনি।
দীর্ঘক্ষণ হাসপাতালের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে আবার কাজ শুরু হয়েছে।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী হোসেন খান বলেন, এটি একটি ভালো কাজ। আমরা এ ধরনের উদ্যোগের পক্ষে। সব ধরনের সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তবে আকিজ গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রথমে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সমালোচনা করে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সমাজে কিছু লোক থাকে তারা যে কোনো ভালো কাজে বাধা তৈরি করে। স্থানীয় জনগণকে উসকে দিয়ে ব্যক্তিগত ফায়দা লুটতে চায়। লোক পাঠিয়ে আবার নিজেই এসেছেন সরিয়ে নিতে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে তার কোনো ভূমিকা নেই। স্থানীয় জনগণকে কোনো ধরনের সহযোগিতা এই ওয়ার্ড কাউন্সিলর করছে না।
এই হাসপাতাল নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, হাসপাতাল নির্মাণে বাধার কথা তিনি শুনেছেন। আকিজ গ্রুপের লোকেরা তাঁকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্থানীয় কাউন্সিল এটা করাচ্ছেন। তিনি গুজব তৈরি করে লোকজন জড়ো করে এটা করছেন। বলা হচ্ছে এখন থেকে ভাইরাস ছড়াবে। এখানে তো পরীক্ষা করা হবে। ছড়াবে কীভাবে?
জাফরুল্লাহর অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর টাকা-পয়সা নেওয়ার জন্য এটা করছেন। তাঁর প্রশ্ন এই লোকের এত বড় ধৃষ্টতা হয় কীভাবে। তিনি বলেন, এখন পুলিশ গিয়েছে। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।জাফরুল্লাহ বলেন, এই হাসপাতাল নির্মাণে আকিজ জমি ও আরও সহায়তা দিয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ৩০১ শয্যার একটি হাসপাতাল তৈরি করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ গ্রুপ। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আকিজের নিজস্ব দুই বিঘা জমিতে হাসপাতালটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
আকিজ আশা করছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালটিতে রোগীদের চিকিৎসা শুরু করা যাবে। এটি তৈরি হচ্ছে তেঁজগাও-গুলশান লিংক রোডের শান্তা টাওয়ারের পেছনে। আকিজ সেখানে বিনা মূল্যে রোগীদের চিকিৎসা দেবে।
হাসপাতাল নির্মাণকাজ বন্ধের বিষয়ে আকিজ গ্রুপের পরিচালক শেখ শামীম উদ্দিন বলেন, কোনো সমস্যা নেই। সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সম্মতির ভিত্তিতেই আকিজ গ্রুপ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের পরীক্ষা ও তাদের চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে অস্থায়ী হাসপাতাল গড়ে তুলছে।
তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে তেজগাঁওয়ে টিবিএস মোটরসাইকেল বিক্রির যে শোরুমটি ছিল সেটিকে অস্থায়ী হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহযোগিতায় এখানে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে কি না তা সনাক্ত করা এবং আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।
শেখ শামীম বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এই হাসপাতালটি হবে ৩০১ শয্যার। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আকিজের নিজস্ব দুই বিঘা জমিতে হাসপাতালটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি দুই সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালটি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু করতে পারবে। এটি তৈরি হচ্ছে তেঁজগাও-গুলশান লিংক রোডের শান্তা টাওয়ারের পেছনে। আকিজ সেখানে বিনা মূল্যে রোগীদের চিকিৎসা দেবে। আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন আকিজের চেয়ারম্যান সেখ নাসির উদ্দিন ও অন্যান্য পরিচালকেরা। এ ছাড়া সহায়তা করছেন দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
শামীম উদ্দিন বলেন, আকিজ গ্রুপের পরিচালকেরা ব্যবসার বিভিন্ন বিভাগ থেকে নানাভাবে মানুষকে সহায়তা করছেন। তারা মাস্ক তৈরি করে দিয়েছেন। খাদ্য বিতরণ করছেন। জীবাণুনাশক বিতরণ করছেন।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আকিজ গ্রুপের এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আকিজ গ্রুপ জনগণের সেবায় এগিয়ে এসেছে। তাদের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তাদেরকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা শনিবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারির সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, নতুন করে কারও মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েনি। আক্রান্তের মোট সংখ্যা আগের মতোই ৪৮ জন আছে। বরং আমরা একটা সুখবর দিতে চাই, যাদের মধ্যে আগে সংক্রমণ হয়েছিল, তাদের মধ্যে আরও চারজনের মধ্যে এখন আর কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ নেই। এ পর্যন্ত মোট ১৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছে। গত ৭২ ঘণ্টায় নতুন করে কারও মৃত্যুর তথ্য না আসায় মৃতের মোট সংখ্যা আগের মতোই পাঁচজনে রয়েছে।