অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ইতিমধ্যে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৯ জানুয়ারি প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এরপরই প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা।
এবার নানা অনিশ্চয়তা ও শঙ্কার মধ্যেও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। দলের জনসমর্থন ধরে রাখা, বর্তমান সরকারের ‘গণতন্ত্রবিরোধী আচরণ’ নতুন করে প্রমাণ করাসহ আন্দোলনের অংশ হিসেবেই এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও বিএনপির প্রার্থীদের প্রতি সমর্থন দেওয়া হয়েছে। দলটির বিশ্বাস, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দুই সিটিতেই বিএনপির মেয়র প্রার্থীর জয় হবেন। তবে এখনও পর্যন্ত এ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো আলামত বা আস্থা তারা পাচ্ছে না।
এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার সময়ই বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সিটি নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে না। সবার জন্য সমান মাঠ তৈরি হবে না। যদিও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগত নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
এখন প্রশ্ন হলো-বর্তমান সরকারের অধীনে আসলে কি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে? সরকার এবং নির্বাচন কমিশন থেকে বার বার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। নির্বাচনী প্রচারণা এখনো শুরু হয়নি। এর মধ্যেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদেরকে গ্রেফতার-অপহরণ শুরু হয়ে গেছে।
দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী তাজউদ্দিন আহমদ তাইজুলকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর বংশাল থানার পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাকে থানায় নিয়ে অনেক সময় ধরে আটকে রাখার পর পুরনো একটি মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।
এরপর, গত রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ফয়েজকে অপহরণ করা হয়েছে। পরে সোমবার মুন্সীগঞ্জের একটি আলু খেতে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, ফয়েজের মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাওয়ায় রবিবার সেগুনবাগিচায় বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আপিল করার জন্য যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যায়।
দুইটি ঘটনা ঘটেছে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার আগেই। এখন নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার অবস্থা কি হবে? বিএনপি সমর্থিত অন্য প্রার্থীরাও এখন গ্রেফতার-অপহরণ আতঙ্কে ভোগছেন।
শুরুতেই গ্রেফতার অপহরণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মানুষ। তারা মনে করছেন, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের যে প্রতিশ্রতি দিচ্ছেন তা আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই না। যেখানে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের আগেই সরকার বিএনপি প্রার্থীদেরকে গ্রেফতার-অপহরণ শুরু করেছে, সেখানে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, এই দুইটি ঘটনার মাধ্যমে সরকার মূলত বিএনপি প্রার্থীদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছে যে তোমরা এখনো নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াও। সরকার বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। অবস্থার আলোকে মনে হচ্ছে, নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার পর বিএনপি প্রার্থীরা মাঠেই নামতে পারবে না। আর নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র তো সরকারি দলের লোকদের দখলেই থাকবে।
দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তবে উদ্ভূত সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রার্থীরা।
নানা হিসাব-নিকাশ করে ঢাকার দুই সিটিতে দলের দুই তরুণ নেতাকে মেয়র প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন। এবারই প্রথম কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। অন্যদিকে ঢাকা দুই ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে উত্তরে মেয়র পদে লড়েছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল। তবে ওই দিন ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরেক ব্যবসায়ী প্রয়াত আনিসুল হক। নানা শঙ্কা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও দুই মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি সবগুলো ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা এবার বেশ চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
এছাড়া বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদেরকে বিভিন্ন ভয় ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যেতে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইশরাক হোসেন।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গোপীবাগে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির এ মেয়র প্রার্থী বলেন, চাপ সৃষ্টি করে লাভ নেই। আমরা কোনোভাবেই ভোটের মাঠ ছেড়ে যাব না। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়ে যাব। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকব।