এ বছরের প্রথম ছয় মাসে দুই হাজারের বেশি নারী ও মেয়েশিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩১ জন। গণধর্ষণ, ধর্ষণের পরে হত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের হারও অন্য সময়ের চেয়ে বেশি।
সোমবার সকালে ‘বর্তমান জাতীয় পরিস্থিতি, অব্যাহত নারী ও শিশু নির্যাতনের প্রতিবাদ ও সামাজিক নিরাপত্তা’র দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর সেগুনবাগিচার সুফিয়া কামাল ভবন মিলনায়তনে এই সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
এতে বলা হয়, নারী ও শিশুদের উত্ত্যক্তকরণ ও যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা বেড়েই চলছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত দুই হাজার ৮৩ জন নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৩ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৬ জনকে। এ ছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১২৩ জনকে।
সংস্থাটি সংরক্ষিত ১৪ টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী বছরওয়ারি হিসাব রাখে।
সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বিভিন্ন কারণে এই সময়ে ২৭৬ জন নারী ও মেয়ে শিশুকে হত্যা করা হয়েছে ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১০ জনকে। শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন ৫৪ জন নারী ও শিশু। যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৭০ জন। আর এ সময়ে মারধরের শিকার হয়েছেন ১৪৭ জন।
যৌতুকের কারণেও বড় সংখ্যক নারী নির্যাতনের শিকার হয় বলে সম্মেলনে জানানো হয়। তথ্য বলছে, যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৯৪ জন। এর মধ্যে হত্যা করা হয়েছে ৪৭ জনকে। এতে আরও জানানো হয়, এসব নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনায় মাত্র তিন থেকে চার শতাংশ মামলায় সাজা হয়েছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ধর্ষণ আইনের সংশোধন ও সংস্কার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যরা যাতেএ ধরনের অপরাধ থেকে দূরে থাকে। তবে এ জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
নারী ও মেয়েশিশুর প্রতি যৌন নিপীড়নসহ সকল প্রকার সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করা, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েশিশুদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা, উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, হত্যা ও নিপীড়ন রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাসহ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে ৩২টি সুপারিশ করা হয়।
সম্মেলনে সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, লিগ্যাল এইডের পরিচালক মাকসুদা আক্তারসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: প্রথম আলো