অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মুখে বায়বীয় উন্নয়ন আর জনপ্রিয়তার কথা বললেও নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক ততই বাড়ছে। ক্ষমতা হাতছাড়া হলেই খুন-হত্যা, গুম-অপহরণ, দুর্নীতি-লুটপাটের দায়ে জনগণের চরম রোষাণলে পড়তে হবে। আর বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর দীর্ঘ ১০ বছর যাবত নির্মম নির্যাতনের বিষয়তো আছেই। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার জরিপের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের কাছে তথ্য এসেছে ক্ষমতা হাতছাড়া হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।
এসব কারণে আওয়ামী লীগ এবার কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যা যা করার দরকার তারা তাই করবে। এজন্য তারা কিছু বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলটির ওয়ার্কিং কমিটি ও সম্পাদক মণ্ডলীর সভায় ড. কামাল, বি. চৌধুরী, আ স ম রব, মান্না ও বিএনপির সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন জাতীয় ঐক্য যদি গণজোয়ার সৃষ্টি করতে পারে তাহলে মাঠ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হাল ছেড়ে দিতে পারে। এমন কি জাতীয় ঐক্যের গণজোয়ারে তারা মিশেও যেতে পারে। এজন্য নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে শুধু উন্নয়নের কথা না বলে নেতাকর্মীদেরকে ভয় দেখাতে হবে যে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসতে পারলে তারা বাড়ি-ঘরে থাকতে পারবে না। বিএনপি-জামায়াত তাদের ওপর হত্যা-নির্যাতন চালাবে। জীবন বাজি রেখে হলেও আগামীতে আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে হবে। অন্যথায় জান-মাল রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।
এই বৈঠকের পরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সভা-সমাবেশে গিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ তার এলাকা ভোলায় গিয়ে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে একদিনেই ১ লাখ লোক মারা যাবে। ওবায়দুল কাদেরতো গত ১ বছর ধরেই নেতাকর্মীদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন। গত শুক্রবার নির্বাচনী গণসংযোগে গিয়ে বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে রক্তের বন্যা বইয়ে দেবে। দেশে লাশের পাহাড় বানাবে। আর রোববার আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে ৫ লাখ লোক মারা যাবে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামও প্রতিদিন সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, আগামীতে ক্ষমতায় আসতে না পারলে আমাদের অস্তিত্ব থাকবে না। নির্বাচনে আমাদেরকে আক্রমাণত্মক হতে হবে।
এভাবে তারা নেতাকর্মীদেরকে মাঠে রাখার জন্য তাদের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীদেরকে সহিংস হতেও উৎসাহীত করছে।
এরপর, আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় পরিকল্পনা হলো নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র দখল। তাদের সিদ্ধান্ত হলো-বিএনপি নির্বাচনে আসলেও ভোটের দিন তাদেরকে কেন্দ্রে যেতে দিবে না। এমনকি প্রয়োজনে তাদেরকে এলাকাতেও থাকতে দেবে না। জেতার জন্য যা যা করা দরকার তারা তাই করবে।
গতকাল রোববার ঢাকা উত্তর অঞ্চলের আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি হয়ে গেছে। ভোটের দিন কার কি দায়িত্ব সেটাও বলে দেয়া হয়েছে। ভোট কেন্দ্র আমাদের দখলেই থাকবে। ধানের শীষের ব্যাজ ধারণ করে কেউ ভোট কেন্দ্রে আসতে পারবে না।
একজন ওয়ার্ড সভাপতি জানান, নির্বাচন হবে। বিএনপি নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আবার লগি-বৈঠা লইয়া মাঠে নামবো।