অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মাদক বিরোধী অভিযানের মধ্যেই ওমরা পালনের নাম করে রাতের আধারে সৌদি চলে গেছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ও সারাদেশে ইয়াবার গডফাদার হিসেবে খ্যাত আব্দুর রহমান বদি। মাদকবিরোধী অভিযানের সময় এমপি বদির দেশত্যাগ নিয়ে অবশ্য জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সন্দেহভাজন একজন মাদক ব্যবসায়ী কী করে দেশ ছেড়ে সৌদি চলে গেলেন এনিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্টজনেরা।
মসজিদুল হারামে রমজানের বাকী সময় ইতেকাফ করতে সৌদি গেছেন বলে এমপি বদি এমন দাবি করলেও খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।
সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, দুইটি কারণে সরকারই এমপি বদিকে ওমরাহ পালন করতে সৌদি পাঠিয়েছে।
প্রথমত: কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক রিপোর্টে সব সময় মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকার প্রথমে ছিল এমপি বদির নাম। আর সারাদেশে ইয়াবার গডফাদার হিসেবেও এমপি বদি পরিচিত। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদক বিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ১৩০ এর বেশি মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আলোচিত এই এমপি বদি রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এনিয়ে বিশিষ্টজনেরাসহ সারাদেশে মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দাবি উঠে এমপি বদিকে গ্রেফতারের। এতে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকার ও প্রশাসন। বিতর্ক এড়াতে সরকার বদিকে দেশের বাইরে পাঠাতে সিদ্ধান্ত নেয়।
দ্বিতীয়ত: মাদক বিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইয়াবার গডফাদার এমপিকে বদিকে গ্রেফতার না করলেও টেকনাফের কাউন্সিলর নিরপরাধ একরামুল হককে বাড়ি থেকে ধরে এনে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। ইতিমধ্যে এই হত্যাকান্ডের অডিও রেকর্ড প্রকাশ হওয়ার পর এনিয়ে এখন সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাউন্সিলর একরামুল হক ছিলেন এমপি বদির মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্চার। টেকনাফে এমপি বদি একমাত্র একরামুলকেই প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করতেন। একরামকে সরিয়ে দিতে এমপি বদি দীর্ঘদিন ধরেই পরিকল্পনা করে আসছিলেন। সরকারের এই মাদক বিরোধী অভিযানকেই একরামকে সরিয়ে দেয়ার মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
টেকনাফের স্থানীয়রাও বলছেন, একরাম হত্যার সঙ্গে এমপি বদি সরাসরি জড়িত। এমপি বদিই কোটি কোটি টাকা খরচ করে একরামকে হত্যা করিয়েছে।
একরাম হত্যার সঙ্গে এমপি বদির জড়িত থাকার অভিযোগ উঠার পর এনিয়েও চরম বেকায়দায় পড়ে সরকার।
আর এমপি বদির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় অনেক নেতার দহরম মহরম সম্পর্ক রয়েছে।
জানা গেছে, পরিস্থিতিকে সাময়িকভাবে সামাল দিতে ওবায়দুল কাদেরই এমপি বদিকে ওমরাহ পালনে সৌদি চলে যেতে নির্দেশ দেন।
আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, বদি চাচ্ছিলেন অন্যকোনো দেশে চলে যেতে। কিন্তু, অন্যকোন দেশে চলে গেলে তখন প্রশ্ন উঠবে যে বদি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এজন্য ওমরাহ পালনের নাম করে সরকার তাকে বিদেশ পাঠিয়েছে।