দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা বলেছেন, সেনাবাহিনী ছাড়া এখন যেকোন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা অসম্ভব। জনগণ মনে করে, আমি ভোট দিলে কি হবে। প্রার্থীতো আগেই ঠিক করা।
আলোচকরা বলেন, এ দুটি সিটি নির্বাচনের দিকে সবাই তাকিয়ে রয়েছে। কেননা এর উপর নির্ভর করবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠ হবে কিনা। নির্বাচন কমিশনের হাতে সকল ক্ষমতা রয়েছে। তারা চাইলে নির্বাচন সুষ্ঠ ও সুন্দর হতে পারে।
সোমবার (২৩ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় সুজনের পক্ষ থেকে ১২টি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেন সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, যারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে না তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কাছে লিখিতভাবে প্রতিবেদন দাখিল এবং যারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে তাদের জন্য প্রশংসাপত্র থাকা উচিত। এগুলো তাদের নিজ নিজ চাকরির ব্যক্তিগত নথিপত্রে সংরক্ষিত থাকবে এবং ভবিষ্যতে পদোন্নতি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে তা বিবেচনা করা যেতে পারে।
‘বর্তমানে নানা কারণে নির্বাচনের প্রতি গণউদাসিনতা দেখা দিয়েছে’ উল্লেখ করে সুজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘গণউদাসিনতার কারণগুলো ব্যাপক এবং বিস্তৃত। যেমন, একতরফা ও জবরদস্তিমূলক ভোট ছিনতাই, সংস্কৃতি, উপযুক্ত প্রার্থীর অভাব, নির্বাচনের পর নির্বাচিতদের গণবিচ্ছিন্নতা, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি ইত্যাদি। গণউদাসীনতা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথে একটি বড় বাধা। জনগণকে সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার যত রকম উপায় আছে তা নিতে হবে। ব্যাপকভাবে জনগণ ভোটকেন্দ্রে এসে ভোটের গণজোয়ার সৃষ্টি করলে প্রশাসন বা যারা সুক্ষ্ম বা স্থূল কারচুপি ফাঁদ পাতে তাদের সেই ফাঁদ পাতার কৌশল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়।’
এছাড়া আরও বলা হয়, ‘নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন সমাপ্তির অন্তত এক সপ্তাহ পর্যন্ত নির্বাচন সংক্রান্ত নানা ধরনের অভিযোগ গ্রহণ এবং তা প্রতিকারের একটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করা উচিত। নির্বাচনি ব্যয় পর্যবেক্ষণের একটি সুষ্ঠু পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। মনোনয়ন ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, বাণিজ্যমুক্তকরণ এবং দলের স্থানীয় সংগঠনের মতামতকে গণতান্ত্রিকভাবে বিবেচনার যেই সুযোগ আইন করে দিয়েছে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা দরকার। ওপর থেকে প্রার্থী চাপানোর প্রবণতা বন্ধ করা হোক।’
গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিজের অফিসারকে রিটার্নিং অফিসার বানিয়েছে, এটা খুব ভালো লক্ষণ। কিন্তু এই রিটার্নিং অফিসারের কাছে সব ক্ষমতা থাকতে হবে। ক্ষমতা কিছুটা জেলা প্রশাসক, কিছুটা কমিশনের কাছে থাকলে আসন্ন সিটি নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।’
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা কমিশনের আছে। কমিশন যদি মনে করে নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে তাহলে সে বাতিল করতে পারে। অভিযোগ হলো পত্রিকায় টেলিভিশনে অভিযোগ আসলেও কমিশন বলে ‘কই আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ আসে নাই’। সংবাদ মাধ্যম নির্বাচন কমিশনের একটি সোর্স। মিডিয়া অনেক শক্তিশালী একটি সহযোগী নির্বাচন কমিশনের জন্য। সেখানে যদি বলা হয়, আমাকে কোনও কমপ্লেইন করা হয়নি- তাহলে আপনাকে কী ক্ষমতা দেওয়া হলো? সেই ক্ষমতা আপনাদের দেখা উচিত। আমাদের কাছে কেউ কমপ্লেইন নিয়ে আসবে এ জন্য আমরা বসে থাকিনি। পরের দিন খবরের কাগজে দেখেছি, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। চেষ্টা করেছি তদন্ত করার।”
তদন্ত রিপোর্ট অভিযোগকারীকে সঙ্গে সঙ্গে দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় বাস্তবায়ন করার জন্য কোনও আইন সংশোধনের প্রয়োজন নাই। কেন মানুষ বিমুখ হয় নির্বাচন থেকে? একের পর এক নির্বাচনে যদি একটি মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ না পায় তাহলে সে অবশ্যই নির্বাচন বিমুখ হবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে তাই হয়েছে। এখন বাংলাদেশের বেশিরভাগ লোক মনে করে ভোট দিলেও কিছু হবে না, না দিলেও কিছু হবে না। রাস্তায় নামলে বলে- স্যার ভোটটা কি দিতে পারবো নাকি? এই অবস্থা তো বাংলাদেশে ছিল না। কারচুপি শুধু বাংলাদেশে না, বহু জায়গায় আছে। দুনিয়ার সব জায়গায় হয়। যদি জনগণ মনে করে তারা ভোট কেন্দ্র পাহারা দেবে এবং ভোট কেন্দ্রে যাবে, আর দু-চার জায়গায় তা বাস্তবায়ন করা হয়, তাহলে কারচুপি করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে বলে আমার বিশ্বাস।’
সুজন সভাপতি বদিউল আলম মজুমদারের পরিচালনায় গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন সাবেক ব্রি.(অবঃ) সাখাওয়াত হোসেন, নগর পরিকল্পনাবিদ তোফায়েল আহমেদ, বাসদ সভাপতি খালেকুজ্জামান, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। গোলটেবিলে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান।
সূত্র: শীর্ষনিউজ ও বাংলা ট্রিবিউন