অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে অবশেষে সরকারের ফাঁদে পা দিলো কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকুরিপ্রার্থীরা। সরকারের কথিত আশ্বাসে আন্দোলন এক মাসের জন্য স্থগিত করেছে আন্দোলনকারীরা। তবে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানা গেছে।
সোমবার বিকেলে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সরকারি দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আন্দোলনকারী প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। সিদ্ধান্তে জানানো হয় আগামী ৭ মে পর্যন্ত একমাস আন্দোলন স্থগিত রাখা হবে, এবং এই সময়ে সরকার কোটা সংস্কারের ব্যাপারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবে।
এদিকে আন্দোলন স্থগিত করার মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা সরকারের ফাঁদে পা দিয়েছেন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সরকারের কাছ থেকে তেমন কোনো স্পষ্ট আশ্বাস না পেয়েও আন্দোলন স্থগিত করাটা ভুল হয়েছে। সরকার ভবিষ্যতে আর কখনোই আন্দোলনকারীদের একত্রিত হওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ দিবে না।
অন্যদিকে আন্দোলনের সময় ঢাবি ভিসির বাসায় আগুন ও ভাংচুর এবং চারুকলায় আসভাবপত্র ভাংচুরের ঘটনায় মামলা দিয়ে আন্দোলনকারীদের হয়রানি করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন স্বয়ং আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থী ও চাকুরিপ্রার্থীরা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকের পর দেয়া বক্তব্যে এমনটার ইঙ্গিতও দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
আন্দোলনকারীরা বলেছে, ‘ভিসির বাসভবনে যারা ভাঙচুর করেছেন, তারা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কেউ নন। অন্য কেউ এর সঙ্গে যুক্ত।’ ছাত্রলীগই ভিসির বাসায় হামলা ভাংচুর করেছে বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং আন্দোলনকারীদেরকে পরবর্তীতে মামলা দিয়ে হয়রানি করতেই সিসি ক্যামেরা ভেঙে ছাত্রলীগকে দিয়ে এই হামলা ও ভাংচুর করানো হয়েছে।
এদিকে আন্দোলন স্থগিত করার বৈঠকের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে ফিরে প্রতিনিধি দলের নেতা হাসান আল মামুন আন্দোলন স্থগিত রাখার বিষয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জনান। এ সময় উপস্থিত শত শত শিক্ষার্থী ‘মানি না, মানবো না’- বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় অনেকে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ২০ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলের ঘোষণা আমরা মানি না। প্রয়োজনে আমরা নতুন কমিটি ঘোষণা করে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। একই সাথে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, রাতে লাইট বন্ধ করে ঢাবি ছাত্রীদের উপর পাশবিক নির্যাতনসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা।
এমন অবস্থায় আন্দোলনকারীরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ারও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আন্দোলনকারীদের বড় একটি অংশই আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তটিকে সরকারের ফাঁদে পা দেয়ার মতই মনে করছেন। তারা মনে করছেন সরকার কোটা সংস্কার পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা বলে মূলত কৌশলে আন্দোলন বন্ধ করতে চাচ্ছে। আর কোটা সংস্কারের ব্যাপরটি খুবই পরিষ্কার। যা বহু আগে থেকেই উত্থাপন করে আসছে আন্দোলনকারীরা। এটা নতুন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কিছু নেই।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকুরিপ্রার্থীরা। তবে রোববার দুপুর ২টা থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী আন্দোলনকারীরা শাহবাগে অবস্থান নেয়ার পর রাতের দিকে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের যৌথ হামলার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে পরিস্থিতি।
সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আশ্বাস পেলেই কেবল আন্দোলন স্থগিত করবে গতকাল থেকে এমন বক্তব্যই দিয়ে আসছিলো আন্দোলনকারীরা। পরে আন্দোলনকারীদেরকে জাহাঙ্গীর কবির নানক জানান প্রধানমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন তাদের সঙ্গে বসার জন্য। সর্বশেষ সোমবার বিকেলে আন্দোলনকারীদের ২০জন প্রতিনিধি ও ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১১ জন প্রতিনিধি আলোচনায় বসেন।
বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৫৫ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের অগ্রাধিকার কোটা রয়েছে। আর বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধা কোটায়। এ জন্য এই কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা।
কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীদের দাবি হলো- কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদে মেধায় নিয়োগ দেয়া; নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা; কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া এবং চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাটমার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।