অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে অবৈধ স্বৈরাচারী সরকার কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। আমাদের নেত্রীকে বন্দী করে রাখা মানে গণতন্ত্রকে বন্দি করে রাখা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা মানে মানুষের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়ার স্বপ্নকে বন্দি করে রাখা। বেগম খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্র আজকে সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। আজকে যেভাবেই হোক আমাদেরকে কৌশলী আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আমাদের দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীদেরকে মুক্ত করে আনবো।’
২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে লন্ডনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। উক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করে লন্ডন বিএনপি।
বক্তব্যের শুরুতেই বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে শুভেচ্ছা জানান। অতঃপর তিনি শ্রদ্ধার সাথে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বিগত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন সেই সকল মানুষগুলোকে যারা গণতন্ত্রের স্বার্থে গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন সেই সমস্ত পরিবারকে যারা তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘৪৭ বছর আগে দেশকে ভালোবেসে মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমিক মানুষ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন। কেউ ফিরে এসেছেন, কেউ ফিরে আসেননি। যারা দেশ স্বাধীন করেছেন তাদের স্বপ্ন ছিল একটি গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে আইনের শাসন থাকবে, বিচার বিভাগ ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে পারবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের স্বার্থে কাজ করবে, নারীরা নিরাপদে দেশের যেকোনো জায়গায় চলাচল করতে পারবে। আজকে আপনাদের সকলের কাছে প্রশ্ন, যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল দেশে কি এখন সেই অবস্থা বিরাজ করছে? না। বিরাজ করছে না। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ দেশের মানুষ দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। কয়েকদিন আগে আপনারা দেখলেন এই মাসে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি স্বৈরাচারী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি কিন্তু অপ্রত্যাশিত কোন বিষয় ছিল না। গত ১০ বছর ধরে আমরা বলে আসছি, এই অবৈধ সরকার অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী সরকার। তারা দেশকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেখানে তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বৈরাচার হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যতবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে ততবারই তারা দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে, মানুষের কণ্ঠস্বর কেড়ে নিয়েছে, র্যাব-পুলিশ দিয়ে অত্যাচার নির্যাতন করেছে, মিডিয়াগুলোকে বন্ধ করেছে, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করেছে। বিএনপি’র সাথে আওয়ামী লীগের এখানেই সবচেয়ে বড় পার্থক্য।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি যতবার রাষ্ট্রশাসন করেছে ততবারই গণতন্ত্রের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। বিএনপি প্রতিবারই চেষ্টা করেছে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে। চেষ্টা করেছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে। ১০ বছর আগে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন পত্রিকাগুলো যেভাবে সরকারের সমালোচনা করতে পারতো আজকে পত্রিকাগুলো সেভাবে সরকারের বিরুদ্ধে কোন কিছু লিখতে বা কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করার সর্বরকম চেষ্টা বর্তমানে চালু রয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশেই এরকম ঘটনা ঘটেছে। কোন যখন এই পর্যায়ে চলে যায় তখন দেশকে রক্ষা করতে সাহসী নেতৃত্ব সব সময় চলে আসে। আমাদেরও সেই রকম একজন সাহসী নেতৃত্ব রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আপনাদের মাঝে অনেকেই উপস্থিত আছেন যারা নব্বইয়ের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। অথবা যারা সরাসরি এই অনুষ্ঠান দেখছেন তাদের অনেকেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। অনেকেই সেই আন্দোলনকে দূর থেকে দেখেছেন, অনেকেই কাছে থেকে দেখেছেন। সেই ৯০-এর আন্দোলন থেকে এখন পর্যন্ত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কোন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। তার কাছে সবসময় প্রাধান্য পেয়েছে গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা আর দেশের উন্নয়ন। সে কারণেই আজকে তাকে রাজনৈতিক মাঠে মোকাবেলা করতে না পেড়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। তারপরেও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের স্বার্থে আপস করেননি। বিশ্ববাসী দেখেছে কিভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বৈরাচারী সরকার কিভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করেছে। সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে কারনে নিম্ন আদালত এবং উচ্চ আদালত জন্য মানুষের মনে যেই সম্মানের জায়গায় ছিল সেই সম্মানের জায়গা হারিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা খেয়াল করেলে দেখবেন, ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন আইয়ুব খান। আইয়ুব খানের সময়ে বাকস্বাধীনতা বলতে কিছু ছিলনা। সার্বিক গণতন্ত্র বলতে কিছু ছিলনা। পৃথিবীর সকল স্বৈরাচারী শাসকদের মধ্যে এটি একটি কমন ট্রেন্ড (trend)। তাদের মধ্যে মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা প্রদান এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রদান থাকে অনুপস্থিত। এসব স্বৈরশাসকরা তাদের অপকর্ম এবং লুটপাট থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে সরিয়ে রাখতে সবসময় উন্নয়নের কথা বলে। তারা উন্নয়নের জিগীর তোলে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী সরকারও একই জিগীর তুলেছে। আইয়ুব খানের সময়ে উন্নয়নের নামে সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে উন্নয়নের মিছিল করা হতো। আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি একইভাবে তথাকথিত উন্নয়নের নামে সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তাদের দিয়ে উন্নয়নের মিছিল করানো হচ্ছে। তাহলে জনগণের পক্ষ থেকে আমরা প্রশ্ন তুলতে পারি, আইয়ুব খানের ভূত তাহলে কাদের উপর সাওয়ার করেছে? আমি বলতে চাই, যার ঘরে রাজাকার বেয়াই থাকবে তার ঘরে আইয়ুব খানের ভূত সাওয়ার করবে যা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
তারেক বলেন, ‘আসেন তাহলে দেখি তারা কি উন্নয়ন করেছে। বাংলাদেশের প্রতিটি সেক্টর তারা ধ্বংস করেছে। প্রথমেই যদি আমরা শুরু করি শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে তাহলে আমরা দেখব বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে মেরুদন্ডহীন করে দেয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নকল এই দুইটি দিয়ে তারা শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। এমনকি কোমলমতি শিশুদের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থা কোন পর্যায়ে পৌঁছালে এরকম একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে? কিন্তু আওয়ামী লীগের এতে কিছু যায় আসে না। কারন তাদের সন্তানেরা চুরির পয়সায় বিদেশে পড়াশোনা করছে। তাদের শিক্ষামন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছে আমরা সবাই চুরি করি। তিনি তার মন্ত্রণালয়ের লোকজনদেরকে বলেছেন আপনারা ঘুষ নেন তবে limited (সীমাবদ্ধ) নেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘চুরি আমরা সবাই করি’। তিনি বলতে চেয়েছেন যা তা হলো- এই অবৈধ সরকারের যারা আছেন সবাই চোর। এই চুরির অর্থ দিয়ে তারা তাদের ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়াচ্ছেন । শেখ মুজিবুর রহমান তো বলেই দিয়েছেন, ‘সবাই পায় সোনার খনি- আমি পেয়েছি চোরের খনি’। যে শিক্ষাব্যবস্থায় নকল থাকে, প্রশ্নফাঁস থাকে সেখানে শিক্ষা বলতে কিছু থাকেনা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে যদি বলতে যাই তাহলে দেখতে পাবো, কিছুদিন আগে সিপিডি নামক একটি প্রতিষ্ঠান একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। যেখানে বলা হয়েছে’ বাংলাদেশ নিম্নআয়ের ৫% জনগোষ্ঠীর মানুষের আয় ছিল ১৭০০ টাকা যা ২০১৬ সালে কমে হয়েছে ৭৩৩ টাকা। গত ছয় বছরে দেশে গরিব মানুষের আয় কমে গিয়েছে। আর যারা অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছে তাদের আয় বেড়ে গিয়েছে। চোর দ্বারা পরিচালিত কোন সরকারের সময় এটি হওয়া স্বাভাবিক। একটির পর একটি ব্যাংক ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক – ইত্যাদি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে। এসব কার টাকা? টাকা জনগণের। পত্রিকার সংবাদ এসেছে, আপনি চেক নিয়ে যদি ব্যাংকে যান সেই চেক ব্যাংক ক্যাশ করে দিতে পারে না। এতোই যদি উন্নয়ন করে থাকেন তাহলে ব্যাংকে গেলে কেন চেক পাস হয় না? কেন একের পর এক ব্যাংক ধসে পড়ছে? এর উত্তর একমাত্র অবৈধ সরকার দিতে পারবে। শুধু ব্যাংক নয় ৩০ লক্ষ মানুষের কষ্টার্জিত শেয়ারের টাকা এক দিনেই লোপাট করে দিয়েছে এই সরকার। শেয়ার মার্কেটের এই রিপোর্ট যখন তৈরি হলো তখন এই অবৈধ সরকারের রাবিশ মন্ত্রী বলেছিলেন, এটি প্রকাশ করা যাবে না। কারণের এর সাথে বড় কোন চোর জড়িত। বড়চর-এর নাম প্রকাশ করবেনা বলেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। গত পরশুদিন বিবিসি বাংলায় আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে বলা হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির হোতারা এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরেই রয়েছে। তাহলে এটি পরিষ্কার যে, যদি সরকার আশ্রয় না দেয় তাহলে চোরেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতর থাকতে পারে না। কারণ ছোট চোরেরা জানে ওপরের বড় চোর কারা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকা শহরে ভিআইপি রোডগুলো ছাড়া অন্যান্য রাস্তার কি অবস্থা তা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেখা যায়। পত্র-পত্রিকা খুললে এখনো ছবি আছে। বর্ষার সময় গলা সমান পানি হয়ে ফলে চলাচল করা যায়না। শুকনা মৌসুমের সময় রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয় ফলে চলাচল করা যায়না । ঢাকা শহরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে হাইওয়ে রাস্তা গুলোর কি অবস্থা? ঢাকার বাইরের অন্যান্য শহরগুলোর কি অবস্থা সেটা কল্পনা করুন। এবং এই রাস্তাগুলো একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। ওনার নাম আপনারা জানেন। বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে রাস্তাঘাট এবং কালভার্ট নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ব্যয় সবচেয়ে বেশি। ভারতে এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ব্যয় হয় ১১ লক্ষ থেকে ১৩ লক্ষ ডলার। চীনে ব্যয় হয় ১৩ লক্ষ থেকে ১৬ লক্ষ ডলার। ইউরোপের দেশগুলোতে ব্যয় হয় ৩৫ লক্ষ ডলার। অথচ বাংলাদেশে রংপুরে এক কিলোমিটার চার লেন হাইওয়ে নির্মাণের জন্য ৬৬ লক্ষ ডলার তারা ব্যয় করেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রতি কিলোমিটার নির্মাণের জন্য ব্যয় করা হয়েছে ৭০ লক্ষ ডলার। ঢাকা মাওয়া সড়কে ১ কোটি ১৯ লক্ষ ডলার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ১ কোটি ২৫ লক্ষ ডলার। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ১ কোটি ২৫ লক্ষ। যা ইউরোপের চেয়েও অনেক খরচ বেশি। আপনাদের কাছে একবারের জন্যও কি মনে হয়েছে, এত টাকার বিনিময়ে যে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে তা আপনাদের চলাচলের জন্য উপযুক্ত? না উপযুক্ত নয়। কাজেই আমরা আরেকটি বড় চরের সাক্ষাৎ পেলাম। এই বড় চোর সম্পর্কে কিছুদিন আগে ফেসবুকে আমরা একটি খবর দেখলাম। অচিরেই বড়চর নামে নারী নির্যাতনের মামলা করা হতে পারে। এই স্বৈরাচারী সরকার যখনই বাংলাদেশ পরিচালনা করেছে কোনবার নারীরা নিরাপত্তা পায়নি। যে দলের নেতাকর্মীরা মা বোনকে সম্মান দিতে জানেনা সে দলের নেতাকর্মীদের কাছে দেশের মানুষ ভাল কিছু আশা করেনা।’
তিনি জানান, ‘ডিজিটাল ‘digital’ শব্দটি দিয়ে এই সরকার প্রথম দিকে বাংলাদেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল। ডিজিটাল নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের সাথে কিভাবে প্রতারণা করছে তা আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চাই। বিশ্বব্যাংকে ২০১৮ সালে doing business-এর প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৬ টি দেশের মধ্যে ১৪৭ তম। এক্ষেত্রে আমাদের ওপরে রয়েছে সেনেগাল, নাইজেরিয়া, সুদান, জাম্বিয়াসহ কিছু দেশ। সুইজারল্যান্ডের করা ওয়ার্ল্ড ডিজিটাল এর ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিতে অগ্রসর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নামই নেই। আমার কাছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে করা প্রায় ৩৫ টির মত রিপোর্ট রয়েছে। কোন জায়গায় তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) একশর নীচে না। সব জায়গায় তারা একশর উপড়ে। আর এই খাতের জন্য বর্তমান অর্থবছরে তারা বরাদ্দ রেখেছে ৯ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। যার বেশিরভাগই কিছুদিন পরেই তারা ডিজিটাল কায়দায় ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যাবে।
দেশের বিদ্যুত পরিস্থিতির উপর তিনি বলেন, ‘এই মিটিংয়ে আসার আগে আমি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় আমার কিছু শুভাকাঙ্খির সাথে কথা বলেছি। আমি তাদেরকে জিজ্ঞাস করেছিলাম ঢাকার শহরে বিদ্যুৎ কতক্ষণ থাকে আর কতক্ষণ থাকেনা। তারা সবাই আমাকে বলেছে, প্রতিটি অঞ্চলেই কম করে হলেও দেড়-দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। ঢাকা শহরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে ঢাকার বাইরের কি অবস্থা? ঢাকার বাইরে প্রতিটি অঞ্চলে কম করে হলেও গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। বিদ্যুতের উপড় আমার কাছে একটি রিপোর্ট আছে। রিপোর্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ৪ ডিসেম্বর ২০১৬ সাল দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট। কিছুদিন আগে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় তথ্য দিয়েছে, ১৯ মার্চ ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী বিদ্যুত উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াট। তাহলে এদের কে আপনি কি বলবেন? ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে বিদ্যুতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশের মানুষ প্রতিদিন লোডশেডিং এর আওতায় পড়ে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষের কথা না হয় বাদ দিলাম। যদি একটি সরকার এতই ভাল হয়ে থাকে তাহলে কেন আইন করা হলো যে, তাদের এসব টাকা খরচের জন্য কেউ কথা বলতে পারবেনা। কেন আইন পাশ করানো হলো যে, বিদ্যুৎ উৎপাদন নিয়ে কোন কেস করা যাবেনা। এখন পর্যন্ত কুইক রেন্টালে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে এই অবৈধ সরকার। গচ্ছা দিয়েছে জনগণের টাকা কিন্তু গচ্ছিত হচ্ছে ওনাদের পকেটে। কাজেই উন্নয়ন যা হয়েছে তা গুটি সংখ্যক মানুষের। দেশের রাস্তাঘাটের কোনো উন্নয়ন হয়নি।’
তিনি বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা আমাদের শতশত নেতাকর্মীকে গুম এবং খুন করেছে। ১৮ থেকে ২০ লক্ষ মানুষকে তারা মামলা দিয়ে জর্জরিত করে রেখেছে। শুধু আমাদের নেতা-কর্মী কিংবা বিরোধী মত নয় দেশের বহু সাধারণ মানুষ এই সরকারের হাতে নির্যাতিত। বহু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা, সম্পদ তারা দখল করে নিয়েছে। এদের হাত থেকে আমাদের দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। এই ভূখণ্ডকে এই হায়নার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এই চোর স্বৈরশাসকদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অতীতে যেভাবে বিএনপি নেতাকর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দায়িত্ব পালন করছে, আমি বিশ্বাস করি ভবিষ্যতেও আমরা তা করতে সক্ষম হবো। আমাদের দিকে জনগণ তাকিয়ে আছে। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর দিকে বাংলাদেশের ১৮ থেকে ২০ কোটি মানুষ তাকিয়ে আছে। মানুষ পরিত্রান চায়। গত দশ বছর ধরে আমরা আমাদের আন্দোলনকে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আজকে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তারা কারাগারে বন্দী করে রেখেছে। আমাদের নেত্রীকে বন্দী করে রাখা মানে গণতন্ত্রকে বন্দি করে রাখা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রাখা মানে মানুষের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়ার স্বপ্নকে বন্দি করে রাখা। বেগম খালেদা জিয়া এবং গণতন্ত্র আজকের সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। আজকে যেভাবেই হোক আমাদেরকে কৌশলী আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আমাদের দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীদেরকে মুক্ত করে আনবো। মুক্ত করে আনবো বাংলাদেশের লক্ষ কোটি মানুষকে যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। যারা বিশ্বাস করে মুক্ত বাক স্বাধীনতায়। মানুষকে শান্তি-শৃঙ্খলা দিতে হবে এবং নিরাপত্তাহীনতা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে হবে। আর তাদেরকে একটি মাত্র রাজনৈতিক দল নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে, তা হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলকে আজকে একটি প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, জনগণ আমাদের ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে তা যথাযথভাবে পালন করতে আমাদেরকে কৌশলী হয়ে কাজ করতে হবে। তারা (অবৈধ সরকার) অনেক সময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ভিতরে ঢুকে গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে যাতে স্বৈরাচারীরা এই ধরনের কাজ করতে সাহস না পায় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এবং তা অর্জন করতে হলে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক ঐক্য। এর মধ্য দিয়েই সম্ভব দেশকে অরাজক পরিস্থিতি থেকে বের করে নিয়ে আসা। দেশের মানুষকে মুক্তি দেয়া।
সর্বশেষ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘চলুন আমরা আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করি। সেই মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য হচ্ছে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা।’