অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের “স্বাধীনতা ঘোষনা” কে দিয়েছেন এবং “স্বাধীনতার ঘোষক” কে এ বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য অতীতে এ বিষয়টিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে বারবার। আদালকে ব্যবহার করে স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষক জিয়াউর রহমানকে বাতিল করে ঘোষক হিসেবে শেষ মুজিবকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি বিতর্কিত রায়ও আদায় করে নিয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। মূলতঃ একটি মহল জাতির ক্রান্তিকালে সঠিক সিদ্ধান্ত দানে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য স্বাধীনতার ঘোষনার কৃতিত্ব হাইজ্যাক করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
প্রকৃত ইতিহাস হলো, শেখ মুজিব চেয়েছিলেন তাঁর ৬ দফা ভিত্তিক পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন আদায় এবং পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলির একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের প্রতিনিধি হিসেবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মসনদে আরোহন। তার এ আকাঙ্খার বাস্তবায়ন ভূট্টোর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। ১৬ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ তারিখ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে ৬ দফা ভিত্তিক ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যান। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমন শুরুর আগ পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামের বেতার কেন্দ্র বাঙ্গালীদের দখলে থাকলেও সেখান থেকে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা করেননি।
২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে দিক নির্দেশনার জন্য গমনকারী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে তিনি আত্মগোপন করতে বলেন। মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত করার তথা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশ দেননি। তিনি ভেবেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমনের ফলে বাংলাদেশের বীর জনতার স্বাধীকার আন্দোলন থেকে যাবে এবং পাকিস্তান সরকার আন্তর্জাতিক চাপে বাধ্য হয়ে আবার তার সাথে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাবে। তার এ ধারনা ভ্রান্ত ছিল। বাংলাদেশের জনগন তার ঘোষনা বা নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করেনি। নেতৃত্বের এই সংকটকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বীর সীপাহসালার মেজর জিয়াউর রহমান ২৫-২৬ মার্চ মধ্যরাতে দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দানের জন্য এগিয়ে আসেন এবং চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করেন।
জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা ও নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করার খবর তখন বিদেশের অনেকগুলো ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো। ব্লগার নীল সুপ্ত থেকে প্রাপ্ত পত্রিকাগুলোর কাটিং ও বই রেফারেন্সগুলো অ্যানালাইসিস বিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলোঃ
এটা ২৭ তারিখের দি ব্যাংকক পোস্টের কাটিং। যেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে ,” I, hereby, assume the powers of the provisional head of the liberation army of Swdhin Bangla Desh. As provisional head, I order the freedom fighters of Bangla Desh to continue the struggle till victory. Jai bangla.”
একই কথার অনুরণণ পাওয়া গেছে এই সংবাদ্গুলোতেও-
March 29, 1971, Straits Times, Provisional government formed এর কাটিং
March 29, 1971, Sydney Morning Herald, Major leads Dacca govt এর ছবি
এসব পেপার কাটিং এটা প্রমাণে যথেষ্ট যে জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিজেকে অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি ঘোষনা দেন এবং সে অনুযায়ী স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।
এবার বিভিন্ন বইয়ের রেফারেন্স উল্লেখ করা হলো:
সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল (অবঃ) কাজী নূর-উজ্জামান এর বই থেকেঃ
১৯৭৪ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের উপর রচিত সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যসম্বলিত বইটির নাম হচ্ছে- ‘হিস্টোরি অফ ফ্রিডম মূভমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ (প্রকাশকাল-১৯৭৪), লেখকঃ জ্যোতি সেন গুপ্ত; সুবিখ্যাত ভারতীয় বংশোদভূত সাংবাদিক।
১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে তিনি একাধারে ছিলেন –
১) ফরেন করেসপন্ডেন্ট, প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (পিটিআই)
২) স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট “টাইমস অফ ইন্ডিয়া।”
৩) স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট “দি ইকোনমিক টাইমস।”
সেই বইয়ে চাক্ষুস সাক্ষীর বর্ণণায় উল্লেখ আছে-
পাকিস্তানী সামরিক অফিসার ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) সিদ্দিক সালিক রচিত বই থেকে-
মেজর জেনারেল(অব.) রাও ফরমান আলীর ‘How Pakistan Got Divided’ বই থেকে-
পাকিস্তানী সামরিক অফিসার লেঃ জেনারেল (অবঃ) কামাল মতিনউদ্দীন রচিত বই থেকে-
মেজর জেনারেল (অবঃ) সুখওয়ান্ত সিং রচিত বই থেকে-
মেজর জেনারেল (অবঃ) শফিউল্লাহ রচিত বই থেকে-
কে এম সফিউল্লাহ বীরউত্তম তার বই BANGLADESH AT WAR এর পৃষ্টা ৪৪-৪৫ এ স্বাধীনতার ঘোষনা সম্পর্কে কি বলছেন,
“All the troops then took an oath of allegiance to Bangladesh. The oath was administered by Zia at 1600 hrs on March 26. Thereafter, he distributed 350 soldiers of East Bengal Regiment and about 200 troops of East Pakistan Rifles to various task forces under command of an officer each. These task forces were meant for the city. The whole city of Chittagong was divided into various sectors and each sector was given to a task force. After having made these arrangements, Zia made his first announcement on the radio on March 26. In this announcement apart from saying that they were fighting against Pakistan army he also declared himself as the head of the state. This, of course, could have been the result of tension and confusion of the moment. As the battalion began to gather strength, in the afternoon of March 27, Zia made another announcement from the Shawadhin Bangla Betar Kendra established at Kalurghat.” (Ref: Maj.Gen.K.M. Safiullah psc, Bir Uttam: Bangladesh at war, Academic Publisher,Dhaka 1989, page 44-45).
বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা কে এম সফিউল্লাহ তার বইয়ে স্পষ্টই বলেছেন, জিয়া ২৬শে মার্চ প্রথম ঘোষণাটি দেন এবং নিজেকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে ২৭শে মার্চ জিয়া কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে আরেকটি ঘোষণা দেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ এই ২৭শে মার্চের ঘোষণাটির কথা বলে এবং ২৬শে মার্চ প্রথম ঘোষণাটি সম্পূর্ণ চেপে যায়।
ইন্দিরা-মুজিব সাক্ষরিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার আসল ইতিহাসের লগ বুক- “বাংলা নামের দেশ”!
“বাংলা নামের দেশ” একটি অসামান্য দলীল। এর প্রকাশনার প্রত্যেকটি ধাপে কোনরূপ ফাঁক রাখা হয়নি। সম্পাদনা মন্ডলী থেকে শুরু করে ছাপাখানা পর্যন্ত পুরো কাজ ইন্দিরা গান্ধী পার্সোন্যালী সুপারভাইজ করেছেন! ইন্দিরা এবং মুজিব আমাদের স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান দুই ব্যক্তি,যৌথভাবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পত্রিকা বেইজড এই স্মরণিকাটিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার দলীল বলে প্রথমেই সার্টিফাই করে গেছেন!!
সেই সাথে আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স-
INDEPENDENT BANGLADESH PROCLAIMED!
The beginning of the history of an Independent & Sovereign Bangladesh was made when Major Ziaur Rahman, an Officer of the 8th battalion of the EBR(East Bengal Regiment) at Chittagong, on 26th March 1971, shortly after the military crack-down, made an electrifying broadcast on “Swadhin Bangla Betar Kendra”(Free Bangla Radio) announcing the establishment of an Independent Bangladesh!!!
Chapter-03; Page-93; Official 1971 War History;
History Devision, Ministry Of Deffence
আরেকটি THE WAY IT WAS বই থেকে, এটা লিখেছে Brigadier (Retd) Zahir Alam Khan যে শেখ মুজিবকে এরেস্ট করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার অপারেশন পরিচালনা করেছে। পৃষ্ঠা-১১ তে সে লিখেছেঃ
While having our evening meal we turned on the radio and heard an Indian radio station, probably All India Radio, Calcutta, announce that Sheikh Mujib had safely crossed over to India. We also heard Major Zia ur Rehman, the second in command of 8 East Bengal Regiment, broadcast declaring the independence of Bangladesh and proclaiming himself the commander-in-chief of the Bangladesh army.
ইতিহাস নিয়ে অনেক কানামাছি খেলা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে ইতিহাসকে বিকৃত করেন। কিন্তু উপরোক্ত অখণ্ডনীয় রেফারেন্সগুলো সম্পূর্ণ অবিকৃত। এই রেফারেন্সগুলো এটাই প্রমাণ করে যে জিয়াউর রহমান-ই স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি।