অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঢাকা শহরের একেবারে প্রানকেন্দ্রে, রমনা থানার নাকের ডগায় এবার জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অংগ সংগঠন যুবলীগের নেতারা এবার সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের খেলার মাঠের জমি দখল করে দলীয় অফিস স্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে বিলবোর্ড তুলে তারা নিজেদের অফিসেরও অবস্থানেরও জানান দিয়েছে যদিও ক্ষমতাসীনদের আশীর্বাদ থাকায় এত বড় অনিয়ম করার পরও কেউ কোন কিছু করতে বা বলতে সাহস পাচ্ছেনা। বরং যুবলীগের দালালি করছে স্কুল প্রশাসন। যুবলীগ যেন নির্ভিগ্নে তাদের অফিস চালাতে পারে সেটা নিশ্চিত করার জন্য স্কুল কমিটি সেই অফিসটির জমিটিকে বাদ দিয়ে স্কুলের বাউন্ডারি দেয়ালও তুলে ফেলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুলের বেশ কিছু শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নং ওয়ার্ড কমিশনার এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সী কামারুজ্জামান এই অপকর্মটি করার পেছনে যুবলীগকে পৃষ্টপোষকতা করছেন। উল্লেখ্য এই মুন্সী কামারুজ্জামানই আবার স্কুলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদেরও সভাপতি। তাই ক্ষমতার অপব্যবহার করেই মূলত তিনি এই অন্যায়টি সাধন করছেন।
অপকর্মের দায় স্বীকারও করেছেন মুন্সী কামারুজ্জামান। এই দখলের ঘটনায় তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, “আমি আওয়ামী লীগ করি। আমি কিভাবে যুবলীগের অফিস তুলে দেবো? তবুও আমি দু-একবার তাদেরকে সরে যেতে বলেছি, কিন্তু তারা সেই কথায় পাত্তা দেয়নি। তাই আমি তাদেরকে অফিস করার মত জায়গা ছাড় দিয়েই আমি স্কুলের বাউন্ডারি দেয়াল তুলেছি।
এই ব্যপারে ১৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি সেলিমুজ্জামান রেজা অবশ্য এই অফিসের সাথে যুবলীগের কোন সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটা যুবলীগের অফিস নয়। এটা ওয়ার্ড যুবলীগের সেক্রেটারী মাকসুদের অফিস। সেই মুলত তার কিছু সাগরেদ ও অন্য লোকজন নিয়ে সেখানে বসে।
যুবলীগ সেক্রেটারী মাকসুদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেননি। তবে তিনি দাবী করেন, স্কুলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী এই অফিসটি খোলার ব্যপারে তাকে অনুমোদন দিয়ে গিয়েছিলেন। মাকসুদ আরো দাবী করেন, অফিসটি চালু রাখার জন্য তারা স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রতিমাসে ১ হাজার করে টাকা ভাড়া হিসেবেও প্রদান করেন।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শেখ ফরিদুজ্জামান অবশ্য এই দখল হওয়ার জন্য মুন্সী কামারুজ্জামানকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, স্কুল কমিটি কাউকেই কোন জায়গা লিজ দিতে পারেনা। ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে মুন্সী কামারুজ্জামানই ঠিক করতে পারেন কোথায় কে অফিস স্থাপন করবেন বা আদৌ করতে পারবে কিনা।
এর আগে প্রায় ৩ বছর তমা কন্সট্রাকশন নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মৌচাক-মগবাজার ফ্লাইওভার নির্মান করতে গিয়ে এই স্কুলের খেলার মাঠেই যাবতীয় মেশিনারিজ ও উচ্ছিষ্ট পন্য রেখে দিয়েছিলেন। এমনকি শ্রমিকদের বসবাস করার জন্য তারা সেখানে দুই তলা একটি অস্থায়ী ভবনও তারা নির্মান করেছিলেন। মাঠটি আসলে সব মিলিয়ে আর ব্যবহারের উপযোগীও নেই। মাঠের এক কোনায় আগে থেকেই ওয়াসার পাম্প বসানো ছিল। আর এবার যুবলীগের অফিস স্থাপিত হওয়ায় বাকিটুকুর ভবিষ্যতও অন্ধকার হয়ে গেলো।
ফ্লাইওভারটি চালু হওয়ার পর গত বছরের ২৬অক্টোবর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অন্যন্য মেশিনারিজ সরিয়ে নিলেও শ্রমিক আবাসনের জন্য তৈরী হওয়া দুই তলা ভবনটি এখনো পড়ে আছে আগের মতই।
কিন্তু এলাকাবাসীর জন্য এখন সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ ও উদ্বেগের কারন হয়ে গেছে যুবলীগের অফিসটাই। কেননা সেখানে দিনে রাতে অবাধে চলে মাদক সেবন। আর যুবলীগের সোনার ছেলেদের নারী উত্যক্ত করার অনুশীলন দিনে দিনে বেড়ে যাওয়ায় অভিভাবক এবং এলাকার সাধারন মানুষও হয়ে পড়েছেন উদ্বিগ্ন।
আওয়ামী লীগ এবার ক্ষমতায় আসার পর দেশজুড়েই শুরু হয় জমি দখলের উৎসব। আওয়ামী লীগকে অনেকেই সংখ্যালঘু বিশেষত হিন্দুবান্ধব হিসেবে অভিহিত করলেও বাস্তবতায় দেখা যায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই সবচেয়ে বেশী হিন্দু সম্পত্তি দখল করেছে।
ইতোপূর্বে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ এই ধরনের অভিযোগ বহুবার উত্থাপন করেছে। দুদিন আগে পুজা উদযাপন পরিষদও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধে জমি ও মন্দির দখলের অভিযোগ তুলেছে।
হত্যা, রাহাজানি আর গুমের বাইরে এবারের আওয়ামী আমলে জমিদখল সর্বগ্রাসী ভুমিকায় আবির্ভুত হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।