অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন নিয়ে গত এক সপ্তাহ যে নাটক চলে আসছিল জামিন স্থগিত করে আজ নাটকের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটালেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মতো প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও আজ খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্য না শুনে একতরফাভাবেই জামিন স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রধান বিচারপতি ও আইনজীবীদের কথোপকথন থেকে বুঝা যায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের তিনি আজ পাত্তাই দেন নি। জানা গেছে, এনিয়ে আজ প্রধান বিচারপতির এজলাসে তুমুল হট্টগোল হয়েছে। এমনকি খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান বিচারপতিকে ‘র’ এর দালাল বলেও আখ্যায়িত করেছেন।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সরকার সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ার জন্য নয়।
জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত লোক। সরকারের নির্দেশের বাইরে গিয়ে তিনি কোনো আদেশ-নিষেধ দিবেন এটা আশা করাটাও ভুল।
কারণ, সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বিচারক হিসেবে কাজ শুরুর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে (১৯৯৯ সালে) ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করেছিলেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০০৩ সালে বিএনপি সরকারের আমলে একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হন। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে উন্নীত হন।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দুইবার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য করা সার্চ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন ও বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে তিনিই বাছাই করেছেন। স্বাধীনতার পর কাজী রকিব উদ্দিন ছিলেন সবচেয়ে বিতর্কিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আওয়ামী লীগ সরকার তাকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে। এরপর বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাও আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত লোক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনদের মতামতকে উপেক্ষা করেই সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নুরুল হুদার নাম প্রস্তাব করেছিলেন।
এরপর সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনালেরও চেয়ারম্যান ছিলেন। কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে হত্যা করার জন্যই সরকার তাদের পরীক্ষিত ব্যক্তি মাহমুদ হোসেনকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করেছিলেন। বিচারপতি মাহমুদ হোসেনও একতরফা বিচারের মাধ্যমে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির আদেশ দিয়ে সরকারের এজেন্ডা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াত নেতাদেরকে ফাঁসি দেয়ার পুরষ্কার হিসেবেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সরকার তাকে প্রধান বিচারপতির পদে বসিয়েছেন। এই মাহমুদ হোসেন খালেদা জিয়াকে জামিন দেবেন এটা দূরাশা ছাড়া আর কিছু নয়।