অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দিতে আজ স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসভা করতে চেয়েছিলো আওয়ামী লীগ। কিন্তু স্মরণকালের সেরা জনসভা না হলেও এই সভাকে কেন্দ্র করে স্মরণকালের সেরা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে আজ রাজধানীবাসীকে। আজ সারাদিনই রাজধানীতে যানবাহন কেন্দ্রিক চরম ভোগান্তিতে ছিলেন সাধারণ মানুষ। কোথাও ছিল তীব্র থেকে তীব্রতর যানজট। আবার কোথাও ছিল পরিবহনশূন্য ফাঁকা রাস্তা। যানজটে পরিবহনে ঠাসাঠাসি থাকলেও সেখানে সাধারণ যাত্রীদের স্থান হয়নি। আবার ফাঁকা রাস্তায় যানবাহন না থাকা ছিল আরো এক ভোগান্তির কারণ। সবমিলিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তির যেন শেষ ছিল না।
বুধবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছিল আওয়ামী লীগের জনসভা। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকে রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের জেলাগুলো থেকে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী ছুটতে থাকেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে। কেউ মিছিল সহকারে পায়ে হেটে চলতে শুরু করেন। আবার কেউ বাস, মিনিবাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানে করে যান সমাবেশেরে দিকে। এক সাথে মানুষের তীব্র চাপ, নিরাপত্তা ও শৃংখলার জন্য ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা।
চরম ভোগান্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ বলছেন, আইনশৃংখলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ ২-৪ ঘন্টার সমাবেশের অনুমতিও দেয়না জনগনের ভোগান্তির কথা বলে। অথচ সরকারি দল ব্যস্ত রাস্তাগুলো বন্ধ করে দিয়ে সারা ঢাকাকে একপ্রকার অবরুদ্ধ করে দিনব্যাপী সমাবেশ করছে। ডিএমপি বা আইনশৃংখলা বাহিনী এসব ভোগান্তির ব্যাপারে এখন কি বলবে?
এদিকে আজ কর্মদিবস থাকায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ছিল চরমে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জনসভাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দুর্ভোগ মেনে নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, এক সাথে মানুষের ঢলের কারণে কোথাও যানজট আবার কোথাও পরিবহনশুন্য হয়ে পড়েছে।
বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর বনানী, মহাখালী, মগবাজার, কাকরাইল, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ি এবং মিরপুর থেকে আগারগাঁও, বিজয়সরণী, ফার্মগেট, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। সকাল থেকেই মিরপুর এলাকা ছিল গণপরিবহন শূন্য। মিরপুর থেকে অফিসপাড়া মতিঝিলগামী বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানীর বাস চলাচল করলেও তাতে সাধারণ যাত্রীদের স্থান ছিল না।
আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতা তার কর্মীদের সমাবেশস্থলে নেয়ার জন্য বাসগুলো রিজার্ভ করে রেখেছিলেন। ওই বাসগুলোতে শুধুমাত্র সমাবেশগামীরাই যেতে পারবেন। কিছু ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান দেখা গেলেও সেগুলো ছিল রিজার্ভ করা। বিকেল ৩টা থেকে সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে ছুটতে শুরু করে মানুষ। ফলে অফিসে যেতে যানবাহনের জন্য যাত্রী সাধারণের হাহাকার অবস্থা দেখা দেয়। দুয়েকটি গণপরিবহন দেখা গেলেও সেখানে তিল ধারণের স্থান ছিল না। যার কারণে অনেক যাত্রী কিছুদুর পায়ে হেটে, কিছুদুর ভ্যান গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে পৌছান। কেউ কেউ রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবার, পাঠাও -এর যানবাহন ব্যবহার করলেও যানজটে পড়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
এদিকে মিরপুর থেকে বিভিন্ন বাস, মিনিবাস, প্রাইভেটকারসহ যানবাহনগুলো আগারগাঁও পর্যন্ত পৌছালেও বিপাকে পড়ে যায় বিজয়সরণনী পৌঁছালে। কারণ বিজয়সরণী থেকে ফার্মগেট, বাংলামটর হয়ে শাহবাগের রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ফলে গাবতলী, মিরপুর এবং উত্তরা বনানী মহাখালী থেকে আসা যানবাহনগুলো এখানে এসে আটকে যায়। এই সব রুটের গাড়িকে বিজয়সরণী লিংক রোড ব্যবহার করে তেজগাঁও সাত রাস্তার দিকে যেতে বলা হয়। এতে শুরু হয় তীব্র যানজট। তার উপর জনসভামুখী বিভিন্ন বাস রাস্তার পাশে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে সেখানে খাওয়া-দাওয়া করানোয় যানজটের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।
এদিকে বেশিরভাগ যানবাহন রাস্তায় আটকে থাকায় সমাবেশস্থলের বিপরীত দিকের রাস্তাগুলো ছিল ফাঁকা। শুধু তাই নয়, মতিঝিল ও এর আশপাশের সড়কও তখন ফাঁকা ছিল। এসময় বিপরিতগামী যাত্রীরা যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন।
মিরপুর থেকে মতিঝিলে আফিসগামী হামিদুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি যানবাহন পাচ্ছিলেন না। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তিনি একটি লেগুনায় উঠে খামারবাড়ি পর্যন্ত যান। সেখান হেটে ফার্মগেটে রাস্তা পার হন। এরপর কয়েকগুন বেশি ভাড়া দিয়ে একটি রিক্সা করে যান তেজগাগঁও সাতরাস্তা। সেখানে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে জোর করে একটি বিআরটিসি দোতলা বাসে উঠে পড়েন। এরপর আরো প্রায় দেড় ঘণ্টা বিজয়নগর মোড়ে পৌছান। সেখান থেকে আবার রিক্সায় করে মতিঝিলে পৌঁছান।
মাসুম নামে এক গণমাধ্যমকর্মী বলেন, অফিসিয়াল কাজে তিনবার তাকে কারওয়ানবাজার থেকে মিরপুর ও গাবতলীতে যেতে হয়েছে। রাস্তায় গণপরিবহন না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে পাঠাও সার্ভিসের মটরসাইকেল ব্যবহার করেন। এতে করে তার প্রায় ৮ শ টাকা খরচ করতে হয়েছে।
ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, সমাবেশের কারণে রাস্তায় মানুষের সংখ্যা বেশি। একের পর এক মিছিল ও বিপুল সংখ্যক যানবাহন একসাথে ঢুকে পড়ায় কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে রাস্তার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে।