মুসাফির রাফি
বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুর্নীতি মামলার রায় আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। অন্য কোন ঘটনা না ঘটলে ঐদিনই রায়টি দেয়া হবে এবং তার পরিনতিতে বাংলাদেশের আগামী দিনের রাজনীতির গতিপথও অনেকটাই নির্ধারিত হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মুল ধারার মিডিয়ায় অনেকেই এই বিষয়ে তাদের মতামত কিংবা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মামলা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যাই বলুন না কেন, ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রকৃতপক্ষে কোনো অর্থ তছরুপের ঘটনাই ঘটেনি। যে অর্থ নিয়ে মামলা তা ব্যাংকে গচ্ছিত আছে এবং বৃদ্ধি পেয়ে কয়েক গুণ হয়েছে। যে একাউন্ট এর বরাত দিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে জড়ানো হয়েছে তারও কোন ভিত্তি নেই।
১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের পরিবর্তে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন সরকার ব্যবস্থা অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তাহলে ‘প্রধানমন্ত্রীর অরফানেজ ট্রাস্ট’ একাউন্ট কিভাবে তার সাড়ে তিন মাস আগে ৯/৬/১৯৯১ সালে খোলা সম্ভব? যারা নথি জালিয়াতি করেছেন, তারা কি এ তথ্য জানেন না? এই ধরনের বহু অসঙ্গতি ও জালিয়াতির ভিত্তিতে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
কিন্তু যত অনিয়ম বা অসংগতিই থাকুক না কেন, সরকার চাইলে যে কোন রায়ই এই মামলায় দেয়া সম্ভব। অন্তত বাংলাদেশের নিকট অতীতের উদাহরন তেমনটাই ইংগিত করে। এর আগে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের মামলার কার্যক্রম নিয়েও নানা অসংগিতর খবর বেরিয়ে এলেও ট্রাইবুনাল বহাল তবিয়তে এখনো চলছে বরং অভিযুক্ত হিসেবে ইতোমধ্যেই ৬ জনের ফাঁসির রায় কার্যকরও হয়েছে।
অনেকেই বলছেন, বেগম জিয়ার এই পরিনতি তার পুর্ববর্তী ভুলের খেসারত। তার দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে যখন অন্যায়ভাবে এই সরকারের আমলে হত্যা করা হয় কিংবা তার নেতৃত্বাধীন জোটের শরীক দলের শীর্ষনেতাদেরকে যখন ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল তখন বলিষ্ঠভাবে তার প্রতিবাদ না করতে পারায় এবং সরকারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালিয়েও আন্দোলন সফল করতে না পারায় আজ বেগম খালেদা জিয়াকে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়েছে।
বিএনপির যেই সুবিধাবাদী নেতারা জোটের শরীকদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারাকেও অনেকে বেগম জিয়ার রাজনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে মনে করেন।
তবে আমি মনে করি, বেগম জিয়ার যত ব্যর্থতাই থাকুক না কেন, তাকে জেলে পুরে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার কোন উন্নতিই তো হবেইনা, বরং পরিস্থিতি আরো শোচনীয় জায়গায় পৌছে যাবে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে এককেন্দ্রিক ক্ষমতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেয়া হলে এদেশের গনতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেকটাও ঠুকে দেয়া হবে। খালেদা জিয়াকে জেলে ঢোকানো হলে অসংখ্য মানুষ যারা এখনও অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে, দু:শাসনের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার স্বপ্ন দেখে, যারা অপশক্তির করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে চায়, তারা আরো নি:স্ব হয়ে পড়বে। নেতৃত্বের সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠবে বাংলাদেশে।
কি হয় না হয়- ৮ ফেব্রুয়ারীর সেই রায়ের দিকেই তাকিয়ে আছে গোটা বাংলাদেশ……।