অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাধা, আপত্তি, সমালোচনা, বিশেষজ্ঞ ও বিরোধীদলের মতামতকে উপেক্ষা করেই ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে একসঙ্গে একই পরিবারের চার সদস্যের থাকার সুযোগ রেখে একতরফাভাবে ব্যাংক কোম্পানি সংশোধন করে সংসদে পাস করেছে সরকার।
কয়েক বছর ধরেই সরকারি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণ জালিয়াতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সীমাহীন লুটপাট চলছে। আর এসব লুটপাটের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ঋণ জালিয়াতি ও লুটপাটে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বেসিক ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ১৫টি মামলা হলেও মূলহোতা হিসেবে পরিচিত আব্দুল হাই বাচ্চুকে একটি মামলাতেও আসামি করা হয়নি। অবশেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাচ্চুর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছে।
বিগত দুই বছর ধরে ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে সরকার দেশের বাণিজ্যিক খাতের বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে একের পর এক দখলে নিচ্ছে। এসবের মধ্যে প্রথমেই সরকারের টার্গেটে পরিণত হয় দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে বিশ্বস্ত ও আস্থার প্রতীক হিসেবে পরিচিত ইসলামী ব্যাংক। রাতের আধারে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান-এমডি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদের সকল ব্যক্তিকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে সরকার তার পছন্দের লোকদেরকে বসিয়েছে। এভাবে একের পর এক ব্যাংকের এমডি ও পরিচালকদেরকে সরে যেতে সরকার বাধ্য করছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এমডি-পরিচালকদেরকে অপসারণ করা হয়েছে।
নিয়ম-নীতি ভঙ্গ করে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকারের পছন্দের লোকদের বসানোর কারণে যখন সমালোচনার ঝড় উঠে তখন ব্যাংকগুলো দখলের লক্ষ্যে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। সরকারের এই উদ্যোগে দেশের ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বিশিষ্টজনেরা। আপত্তি জানাতে থাকে রাজনৈতিক দলগুলোও। বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে এনিয়ে বার বার বলা হচ্ছে যে, লুটপাট করতেই সরকার এখন আইন করে ব্যাংকগুলোকে নিজেদের লোকদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে।
দেশের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)ও গত শনিবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, ‘ঋণ লোপাট, ব্যাংকের মালিকানাধীনসহ নানা কারণেই ২০১৭ সাল ছিল ব্যাংকিং খাতের কেলেঙ্কারির বছর। ২০১৮ সালেও নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের সুযোগ নেই। কারণ ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে মালিকদের পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে সরকার।
কিন্তু, এসব বাধা, আপত্তি ও বিশিষ্টজনদের মতামতকে উপেক্ষা করেই মঙ্গলবার সংসদে একতরফাভাবে ‘ব্যাংক-কোম্পানি (সংশোধন) বিল, ২০১৮’ পাস করে সরকার। এমনকি সরকারের গৃহপালিত বিরোধীদল হিসেবে পরিচিত এরশাদের জাতীয় পার্টিও আজ সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে সংসদের অধিবেশন চলাকালে ওয়াকআউট করে।
বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, বিগত ৯ বছরের শাসনামলে সরকারের লোকজন দেশের বিভিন্ন খাত থেকে যেসব দুর্নীতি-লুটপাট করেছে সেই টাকা দিয়ে এখন তারা স্বপরিবারে ব্যাংকের পরিচালক হবে। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতেই সরকার একই পরিবারের চারজনকে ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার সুযোগ রেখে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করেছে।
কেউ কেউ বলছেন, দেশের আর্থিক খাতের সব সেক্টর লুট করে সরকার এখন ব্যাংক লুটে মনোযোগ দিয়েছে। আর বাকী আছে মাত্র এক বছর। তাই এখন তারা শেষ মুহূর্তের লুটপাটে ব্যস্ত। দেখা যাবে সরকারের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় খাত ব্যাংকগুলোও ধসে পড়বে। কারণ, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ কমছে এবং খেলাফি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। আর ঋণ গ্রহীতার অধিকাংশই সরকারি দলের লোকজন। এভাবে একদিন ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাবে।