অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা চলে আসছে। খুন-হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, নিরপরাধ মানুষকে অন্যায়ভাবে আটক করে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে পুলিশ সদস্যরা। প্রতিদিনই সংবাদপত্রে পুলিশের বিভিন্ন অপরাধের খবর প্রকাশিত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছে। মুদি দোকানি থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখন পুলিশের বেপরোয়া চাদাবাজির কারণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। তাদের চাহিদা মতো চাদা না দিলেই বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়। পরে পুলিশকে লাখ লাখ টাকা দিয়ে মুক্ত হয়ে আসতে হয়।
এরপর পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ হলো-সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির অপরাধীদের সঙ্গে পুলিশের দহরম মহরম সম্পর্ক। ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে সন্ত্রাসীদের গডফাদারদের সঙ্গে পুলিশের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। পুলিশের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে অপরাধীরা অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। পুলিশের সহযোগিতায় সমাজের প্রভাবশালী ও সন্ত্রাসীরা মানুষের জায়গা জমি দখলের অভিযোগ নিয়মিত উঠছে। সাধারণ মানুষ এখন বখাটে ও ছিনতাইকারীদের শিকার হলেও নতুন জামেলায় পড়ার আশঙ্কায় অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, মাদক ব্যবসা যারা করে ও যেসব বখাটেরা মাদক সেবন করে রাস্তার অলিগলিতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে সবার কাছ থেকেই পুলিশ টাকা পাচ্ছে। এমনকি পুলিশকে এসব ঘটনা জানানোর কিছুক্ষণ পরেই এখবর আবার ছিনতাইকারীদের কাছে চলে যায়। অনেকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করে আবার উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছে।
পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো- বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে হয়রানি। প্রতিনিদিনই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে অন্যায়ভাবে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। থানায় নিয়ে তাদের ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। যাদের সামর্থ আছে তারা পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মুক্ত হয়। আর এখন নতুন আতঙ্কের নাম হলো ডিবি পুলিশ। তারা রাতের আধারে নিরপরাধ মানুষকে মানুষকে তুলে এনে গুম করে ফেলছে। কাউকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ফেরত দিচ্ছে আবার কাউকে গুলি করে হত্যা করে বলছে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুলিশের হয়রানির কারণে তারা তাদের পরিবারের লোকদের সঙ্গে রাতে বাসায় থাকতে পারছেন না।
এছাড়া সাধারণ মানুষকেও এখন বিনা অপরাধে আটক করে নিয়ে অর্থ আদায় করছে পুলিশ। এমনকি পুলিশের পকেটে টাকা না থাকলেই রাস্তা থেকে নিরপরাধ মানুষকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে টাকার জন্য। থানায় নিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এরপর, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো অপরাধেও জড়িয়ে পড়েছে পুলিশ সদস্যরা। প্রায় দিনই দেশের কোথাও না কোথাও পুলিশ কর্তৃক নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। রাতে আসামি ধরতে গিয়ে না পেয়ে ঘরে থাকা নারীদেরকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করছে পুলিশ। আবার থানায় অভিযোগ করতে গিয়েও বিভিন্ন জায়গায় নারীরা পুলিশ কর্তৃক হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এমনকি নিজের সহকর্মী নারী পুলিশদেরকেও ধর্ষণ করার ঘটনা ঘটছে অহরহ। বিচার না পেয়ে নারী পুলিশ কর্মীরা পরে আত্মহত্যাও করছেন।
সর্বশেষ ডিআইজি মিজানের ঘটনায় মানুষ হতবাক হয়ে গেছে। পুলিশের এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা কীভাবে নারীদেরকে ব্ল্যাকমেইল করতে পারেন এনিয়ে মানুষের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এই সংবাদ যখন লিখছি তখনও পত্রিকার প্রধান শিরোনাম পুলিশের নারী এএসআইসহ হোটেলকক্ষ থেকে এমপিপুত্রকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক।
পুলিশের এসব অপরাধ নিয়ে প্রতিদিনই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাও পুলিশের এসব অপরাধের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু, সরকার ও পুলিশ প্রশাসন এসব নিয়ে নীরব।
সাধারণ মানুষ বলছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশই যখন অহেতুক হয়রানি-নির্যাতন করছে, তখন এমন পুলিশ বাহিনী নিয়ে আমরা কি করবো? এমন পুলিশের আদৌ কোনো দরকার আছে কি? তাদের প্রশ্ন, পুলিশ দিয়ে জনগণের কী উপকার হচ্ছে? পুলিশের কাছে যেয়ে আরও উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়। পুলিশ আমাদের নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো অন্যায়ভাবে গ্রেফতার নির্যাতন করছে। চাঁদা না দিলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের দমন না করে তাদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। পুলিশ না থাকলে আমরা আরও বেশি নিরাপদে থাকবো।