অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সরকার প্রধানদের মধ্যে ‘তৃতীয় সৎ’ সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তথ্যটি কতটুকু সঠিক সেটা অবশ্য যাছাই করা যায়নি। তবে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কয়েকদিন যাবত এমনটা দাবি করে আসছেন। শেখ হাসিনার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আরও যা বলছেন, তিনি একজন নামাজী। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। তাহাজ্জুত পড়েন। ফজরের পর নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করেন। কুরআন তেলাওয়াত না করে তিনি কোনো কাজ শুরু করেন না। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র ইসলামের বড় খাদেম। বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও ইসলামের প্রচার প্রসারে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন।
অপরদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কোনো ধর্মকর্ম করেন না। তিনি রাত জেগে অফিসে বসে নেতাদের সঙ্গে গল্প করেন। ঘুম থেকে উঠেন সকাল ১০ টায়।
আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব কতটুকু সত্য সেটার জন্য মনে হয় অনুসন্ধান করার কোনো দরকার হবে না। শনিবার গণভবনে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই বুঝা যাচ্ছে।
শনিবার গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সেই নির্বাচন ভোটারবিহীন ছিল না। জনগণ ভোট দেয়ার কারণেই ৪ বছর পার করা সম্ভব হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছে ১৫৩ জন এমপি। আর বাকী যে ১৪৭ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে সেটাও জনগণের ভোটে নয়। পুলিশ পাহারায় শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় সিল মেরেছে। ভোটার উপস্থিত না হওয়ায় তারা নিজেরাই একেক জনে কয়েকশ করে ভোট দিয়েছে। আর মহল্লার স্কুলছাত্রদেরকে জোর করে কেন্দ্রে নিয়ে নৌকায় সিল মারতে বাধ্য করেছে। এছাড়া ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে দেখা গেছে সব কেন্দ্রের মাঠই খালি ছিল। খালি মাঠে কুকুরকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
একতরফা নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের জনগণের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের লোকজনও এ নির্বাচনকে মেনে নেয়নি। নির্বাচনের পর থেকেই আন্তর্জাতিক মহল সরকারকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়ে আসছে। সর্বশেষ দেশের উচ্চ আদালতও একটি রায়ের পর্যবেক্ষণে বর্তমান সংসদকে অকার্যকর সংসদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শতাংশ সত্য। তবে জনগণের ভোটে ৪০ শতাংশ হয়নি। ওই সময় খোঁজ নিয়ে জান গেছে, বিভিন্ন কেন্দ্রের ভেতর আগের দিন রাতেই নৌকায় সিল মেরে রেখেছে। ৪০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশ ভোট তারা রাতেই দিয়ে রেখেছিল। বাকী ২০ শতাংশ আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী কেন্দ্রে গিয়ে নৌকায় সিল মেরে সম্পূর্ণ করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর এই ৪০ শতাংশ ভোটের মধ্যে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না।
এরপর, প্রধানমন্ত্রী শনিবার বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল। অথচ ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর দলীয় কাউন্সিলে তিনিই বলেছিলেন ‘আগামীতে আর প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখতে চাই না।’ তার এই বক্তব্য দেশের সকল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যে কারো কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না এবং প্রশ্নবিদ্ধ ছিল সেটা ওই দিন প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন। কিন্তু, এখন বলছেন নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল।
তারপর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ ভোট দেয়ার কারণেই ৪ বছর মেয়ার পূর্ণ করা সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এ কথারও কোনো যথার্থতা নেই। কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকার টিকে আছে র্যাব-পুলিশ ও বিজিবি’র ওপর নির্ভর করে। চার বছর যাবত সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বিরোধীদলসহ জনগণকে গৃহবন্দি করে রেখেছে। লুটপাট, দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুট, গুম-অপহরণ, খুন-হত্যা, বার বার গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, সন্ত্রাস-চাদাবাজি, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। কিন্তু, কাউকে কোনো প্রকার প্রতিবাদ করতে দিচ্ছে না। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদেরকে অহেতুক হয়রানি করছে। পুলিশি হয়রানির কারণে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা একদিনও বাসায় পরিবারের লোকজনের সঙ্গে রাত কাটাবার সুযোগ পায় না। সরকারের এসব অন্যায় অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাকে গুম করা হচ্ছে। মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনই এখন দেশ চালাচ্ছে।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আজ চরম মিথ্যাচার করেছেন। একতরফা নির্বাচন কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি। নির্বাচনে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না।
কেউ কেউ রসিকতা করে বলছেন, নিয়মিত নামাজ আর কুরআন তেলাওয়াত করেও প্রধানমন্ত্রী এমন মিথ্যা বলতে পারেন? বিশ্বের তৃতীয় সৎ প্রধানমন্ত্রী যদি এমন মিথ্যা বলেন, তাহলে যারা দুর্নীতিবাজ তারাতো মনে হয় কখনো সত্য কথাই বলেন না।