অ্যানালাইসিস বিডি সম্পাদকীয়
চিরায়ত নিয়মে প্রতিবারের মত আবারো আমাদের মাঝে আসছে আরো একটি নতুন বছর। আজ নতুন সূর্যের উদয় ঘটবে তা হবে ২০১৮ সালের প্রথম দিনের নতুন সূর্য। দেশ-বিদেশে নববর্ষ নিয়ে নানা জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করবে ২০১৭।সতের সালের ঘটনাপুঞ্জি যোগ করে সমৃদ্ধ হবে ইতিহাস। কিন্তু সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করার মত লোক ক’জন পাওয়া যাবে এটাই হল ভাবনার বিষয়। অনেকেই বলে থাকেন ইতহাসের বড় শিক্ষা হল, “ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষাগ্রহণ করে না।”
নতুন বছরের নতুন সকাল। নতুন বছর মানে নতুনের অবগাহন। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানো। নতুন করে স্বপ্ন দেখা। জীর্ণ ও পুরাতনকে বিদায় জানানো এবং নতুন বছরের শুভাগমনে দেশ-জাতির সমৃদ্ধি কামনা করা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সবরকম সংঘাত থেকে মুক্ত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গড়ে উঠুক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার মেলবন্ধন এ প্রত্যাশা করা। গড়ে উঠুক সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ এটাও চাওয়া। দেশের সর্বত্র শান্তি বিরাজ করুক। গুম খুন বন্ধ হোক। জুলুম নির্যাতন বন্ধ হোক। জঙ্গিবাদ নিপাত যাক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরো দৃঢ় হোক, বিশেষ করে শিক্ষাখাত ও ব্যাংকিং খাতে চলা নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলা থেকে দেশ নিস্তার পাক। নতুন বছরে আমরা একান্তভাবে এগুলোই কামনা করছি।
অনেক স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি আমাদের মাঝে আসে। নতুন বছরে নতুন দিন আসে, আমরা জাগ্রত হই। নতুন জীবনের জয়গান গেয়ে অন্তত ওই দিন উজ্জীবিত হই। আনন্দ-উল্লাসের পাশাপাশি আমরা অঙ্গীকার করি, নতুন বছরে নতুনভাবে চলতে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গীকার এর মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে। তার পাশাপাশি যেটা আমাদের দৃষ্টির আড়াল হয়ে পড়ে তা হল ব্যক্তিচরিত্র বদলের শপথ। অথচ এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত হবে বিগত বছরের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে নতুনভাবে, স্বচ্ছ ও সঠিকভাবে, সত্য ও সুন্দরকে সাথে নিয়ে পথচলার শপথ করা।
নতুন বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরো বিস্তার লাভ করুক এ প্রত্যাশা আমাদের। আমরা চাই বর্তমান সরকার জনগণের প্রত্যাশা, আবেগ ও অনুভূতিকে যথাযথ মূল্যায়ন করে দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন ও রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। বিরোধী দলের উপর দমন পীড়ন বন্ধ হবে। উন্নয়নের নামে দেশের সম্পদ লুটপাটের যে সয়লাব চলছে তা বন্ধ করতে সচেষ্ট হবে।
২০১৮ সাল বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় মোড় পরিবর্তনের বছর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এজন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে সরকারকে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে হবে। সবার সদিচ্ছাই পারে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে। ৫ জানুয়ারির যে কালিমা বাংলাদেশের গণতন্ত্রে কালো দাগ হিসেবে ফুটে আছে তা হতে মুক্ত হওয়ার বছর হতে পারে নতুন বছর।
আমরা গণতন্ত্র বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার কথা মুখে বলে বলে ফেনা তুলি, কিন্তু গণতন্ত্রচর্চা করি না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি গণতন্ত্রচর্চায় বলিষ্ঠ ভূমিকা না থাকে, তবে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কী করে। প্রত্যাশা করি, নতুন বছর হোক গণতন্ত্রচর্চার বছর, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বছর। ব্যক্তিচরিত্র বদল ও আত্মসমালোচনা ও আত্মমূল্যায়নের বছর। নতুন বছরে নতুন করে সম্ভাবনা তৈরি হয়, আবার হারিয়ে যায়। আবার সম্ভাবনা তৈরি হয়, আবার হারিয়ে যায়। এ তৈরি হওয়া এবং হারিয়ে যাওয়ার মধ্যেই চলছে আমাদের দিনযাপন, আমাদের বেঁচে থাকা। এমন যেন না হয়। আমাদের পরিবর্তনের চিন্তা যেন সত্যিকার অর্থেই হয়।
আমরা প্রতিটি নতুন বছরে স্বপ্ন ও সম্ভাবনার বীজ বুনি, এ বীজ আবার অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায়। হতাশাগ্রস্ত হয়েও আমরা আবার আশায় বুক বাঁধি, নতুন করে স্বপ্ন দেখি। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন, অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন। একটি সুষ্ঠু, সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনের স্বপ্ন। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন বার বার হোঁচট খায়, চোরাবালিতে আটকে যায়, মাঠে মারা যায়। আমরা মুখ থুবড়ে পড়ি। আমাদের জাগিয়ে তোলার যেন কেউ নেই। সবাই আমাদের আশার বাণী শোনায়। চারদিকে কথার ফুলঝুরি শুনে শুনে আমরা একবার আশায় বুক বাঁধি, আবার আশাহত হই। আমরা সর্বান্তকরণে চাইবো এমন যেন না হয় আঠারো সালে।
আমরা ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই। যে দেশে হানাহানির বদলে সম্প্রীতি বিরাজ করবে। উন্নতি, অগ্রগতি ও প্রগতির মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে মানবিক মূল্যবোধের জয় হবে। মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে। মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি থাকবে। আমরা চাই আমাদের নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠবে একটি সুস্থ সমাজে। মাদক, অশ্লীলতা, দূর্নীতি ইত্যাদির ছোবল থেকে মুক্ত থাকবে আমাদের দেশ, প্রিয় বাংলাদেশ। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।