জুনায়েদ আব্বাসী
স্বাধীনতার পর থেকে যে কয়টি নাম ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব রাজনৈতিক দল দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৎপরতা চালিয়ে আসছে এর মধ্যে বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর জাসদ একটি। ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর হাসানুল হক ইনু তখন ‘গণবাহিনী’ নামে একটি সংগঠন সৃষ্টি করে। যেটাকে সশস্ত্র গণবাহিনীও বলা হয়। ইনুর সেই গণবাহিনীকে অনেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবেও আখ্যা দিয়ে থাকে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে স্বপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ইনুর সংশ্লিষ্টতা আছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে একাধিকবার এ অভিযোগ করেছেন। যদিও ইনু দাবি করেন যে, শেখ মুজিব হত্যার দুই দিন পর তিনি প্রতিবাদে মিছিল করেছেন। তবে, তার এ দাবির কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলে ইনুরা আবার জাসদের কার্যক্রম শুরু করার সুযোগ পায়।
এভাবেই হাসানুল হক ইনু চীন ও রাশিয়ার আদর্শ ধারণ করে গোঠা কয়েক কর্মী নিয়ে দলের কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। সমাজতন্ত্রের পতাকা ধারণ করায় দল চালানোর সব টাকাই আসে রাশিয়া থেকে। ২০০৯ সালের আগে দেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে হাসানুল হক ইনু প্রতিবারই জামানত হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে ২০০৯ সালের নির্বাচনের সময় বামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে জোট করে। জোটের স্বার্থে নির্বাচনে কুষ্টিয়ার একটি আসন ইনুকে ছেড়ে দেয়। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে হাসানুল হক ইনু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এদিকে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা নুহ উল আলম লেনিন ও মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগ করলেও তারা মূলত বামপন্থী হিসেবেই রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত। তাদের সহযোগিতায় বিভিন্ন কৌশলে হাসানুল হক ইনু তথ্যমন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়টি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন।
হাসানুল হক ইনু তথ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পরও দেশের জনপ্রিয় ৩টি গণমাধ্যম দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টিভি ও দৈনিক আমারদেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ করে দিয়ে ইনু গণমাধ্যমকে বলেছিলেন এগুলোর বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ইনুর সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা আজও শেষ হয়নি।
এরপর তথ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পরই রাজনীতিতে ছোট দলের বড় নেতা হিসেবে পরিচিত হাসানুল হক ইনুর হুঙ্কার শুরু হয়ে যায়। পুলিশের বেষ্টনির ভিতর থেকে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকেন। বিএনপি-জামায়াতকে গালি দিয়ে বক্তব্য শুরু করে শেষ করেন আবার গালি দিয়ে। বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রতিদিনই কটাক্ষ মন্তব্য করে যাচ্ছেন ইনু।
জনসমর্থনের দিকে দিয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড় রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। দলটি তিনবার দেশ পরিচালনা করেছে। কিন্তু, সাইনবোর্ড সর্বস্ব দলের নেতা হাসানুল হক ইনু প্রতিদিনই বিএনপিকে নির্মূল করে দিচ্ছেন। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখনও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। আর হাসানুল হক ইনু প্রতিদিনই খালেদা জিয়াকে রাজনীতির মঞ্চ থেকে সরানোর ঘোষণা দিচ্ছেন। ইনু প্রতিদিনই বলছেন, খালেদাকে ধ্বংস করতে হবে, পাকিস্তান পাঠাতে হবে, রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
ইনুর এসব বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হচ্ছে। রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের করুণায় নৌকার যাত্রী হয়ে ইনু সংসদে আসার সুযোগ পেয়েছে। নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করেতো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার যোগ্যতাও নেই। পুলিশি বেষ্টনির ভিতর থেকে ইনু যতই হুঙ্কার ছাড়ুক না কেন, ক্ষমতা চলে গেলে ইনুকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আবার অনেকেই বলছেন, মিছিলে ব্যানার ধরার মতো কর্মীওতো নেই ইনুর। এত হুঙ্কার দিচ্ছে কেন? একেই বলে ‘ছাল নাই কুত্তার বাঘা নাম!’ আওয়ামী লীগের নৌকা থেকে নামার পর ইনু রাস্তায় আসতে পারবে না।
Discussion about this post