আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বর্তমান কমিটিতে কোনও যোগ্য লোক রাখা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, ‘এই কমিটি দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন মোকাবেলা সম্ভব নয়।’ রবিবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের কোন্দল নিরসনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এসব একথা বলেন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকে সাঈদ খোকন বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণে যাদের নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রাণ সঞ্চারিত হবে না। কারণ, এখানে যোগ্য লোকদের স্থান দেওয়া হয়নি। এখানে মুরাদ তার পছন্দের লোকদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মূল্যায়ন করা হয়নি।’
মেয়র সাঈদ খোকনের বক্তব্যের জবাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘এই কমিটি আমি করিনি। এই কমিটি করার জন্য নেত্রী (শেখ হাসিনা) দায়িত্ব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীল সদস্য আব্দুর রাজ্জাককে। তিনি যোগ্য ও দক্ষতা বিবেচনা করে এই কমিটি করেছেন। এই কমিটি নিয়ে আপনার (সাঈদ খোকন) অভিযোগ থাকলে, সেটি আপনি বলতে পারেন।’
কোন্দল নিরসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও মহানগর দক্ষিণের সদস্য সাঈদ খোকনকে নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি. সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ ও উপ দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।
বৈঠকে উপস্থিত নেতারা সাঈদ খোকনের বক্তব্য প্রসঙ্গে বলেন, কমিটি নিয়ে কোনও পর্যবেক্ষণ থাকলে সেটি আপনি (সাঈদ খোকন) কেন্দ্রীয় নেতাদের জানাবেন। কেন্দ্রীয় নেতারা তা দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে জানাবেন। কমিটির কোনও দুর্বলতা থাকলে সেটি নিয়ে যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেত্রী শেখ হাসিনার।
এ প্রসঙ্গে দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ বলেন, ‘কমিটি দিয়েছেন নেত্রী (শেখ হাসিনা)। নির্বাচন এক জিনিস, কমিটি আরেক জিনিস, রাজনীতি ভিন্ন জিনিস। এগুলো সব এক করে ফেললে চলবে না।’
এ সময় বৈঠকে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাইদ খোকনের দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি তুলে আনেন শাহে আলম মুরাদ। জবাবে কেন্দ্রীয় নেতারা অতীত নিয়ে কথা বলতে মুরাদকে নিষেধ করেন।
প্রসঙ্গত, ১৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আজিমপুর পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণে আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান নিয়ে এক অনুষ্ঠানে ঢাকা সিটি করপোরেশনের অনুষ্ঠান মঞ্চে ময়লা ফেলে রাখা হয়। অনুষ্ঠান পণ্ড করার অংশ হিসেবে এই কাজ করা হয় বলে অভিযোগ করেন মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। আর এই ঘটনার জন্য তিনি মেয়র সাঈদ খোকনকে দায়ী করেন।
এ প্রসঙ্গে মেয়র সাঈদ খোকন বলেছিলেন, ‘আমি এই ঘটনার তদন্ত করবো। তদন্তে সিটি করপোরেশনের কেউ এতে জড়িত থাকলে এবং দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বৈঠকে ওই দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘ওইদিন আজিমপুরে আওয়ামী লীগের সভাস্থলে ময়লা ফেলে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তাতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’
রবিবারের বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহে আলম বলেন, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের ডেকেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি।’ তবে কী কথা হয়েছে, তা বলতে রাজি হননি তিনি।
মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘সভায় একেবারেই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমাদের নানা বিষয়ে নিয়ে কথা হয়েছে। এগুলো নিয়ে আমি বাইরে কোনও কথা বলতে চাই না।’
এদিকে মেয়র সাঈদ হোসেন খোকনের বাবা ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের মৃত্যুবার্ষিকী সোমবার (২৭ নভেম্বর)। এ উপলক্ষে একটি স্মরণসভা আয়োজন করেছে সিটি করপোরেশন। এই স্মরণ সভায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সবাইকে একসঙ্গে সম্মিলিতভাবে পালন করতে নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post