অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ-উত্তেজনা ততই বেড়ে চলছে। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের বাকযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। সময় যত যাচ্ছে বাকযুদ্ধের গতিও তত বাড়ছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে এদেশে আর কোনো নির্বাচন তারা করতে দেবে না। ৫ জানুয়ারির মতো একদলীয় নির্বাচন করতে চাইলে সেটাকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহতের ঘোষণাও দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এমনকি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোরও হুমকি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সর্বশেষ আজ শুক্রবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করেছে বলেন, নৈরাজ্য অনেক করেছেন। আপনার সময় শেষ হয়ে গেছে। আপনাকে আর নৈরাজ্য করতে দেয়া হবে না।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। সংবিধানের বাইরে তারা এক চুলও যাবে না। বিএনপির কোনো আবদার তারা মানবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। বিএনপিকে আর আন্দোলন করতে দেয়া হবে না। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য তোফায়েল আহমেদ শুক্রবার বলেছেন, আন্দোলনের হুমকি দিলে বিএনপি নেতাদের জেলে যেতে হবে। তোফায়েল চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, বিএনপির মাঠে নামার ক্ষমতা নেই। বিএনপির যেকোনো আন্দোলন কঠোর হস্তে দমনেরও হুমকি দেন তিনি।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের এসব বাকযুদ্ধ নিয়ে রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ বিভিন্ন মহলে চুলছেড়া বিশ্লেষণ চলছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার যদি এবারও বিএনপিকে বাদ দিয়ে একদলীয় নির্বাচন করতে চায় তাহলে বিএনপি কি সেটা প্রতিহত করতে পারবে? বিএনপি নেতারা আন্দোলনের যে হুমকি দিচ্ছেন তার বাস্তবায়ন কি কখনো করতে পারবেন? নাকি বিগত দিনের মতো হুমকি-ধামকি শুধু বক্তৃতাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
কেউ কেউ বলছেন, তোফায়েল আজ যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ফখরুল-রিজভীদের পক্ষে তা গ্রহণ করা সম্ভব হবে? তোফায়েলের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তারা নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে মাঠে নামতে পারবে?
সাধারণ মানুষের মনে এসব প্রশ্ন জাগারও অবশ্য কিছু কারণ আছে। দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল করার জন্য বিএনপি নেতারা অনেক হুমকি-ধামকি দিয়েছিলেন। কিন্তু, দাবি আদায়ে তারা মাঠে নামতে পারেন নি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনেক চেষ্টা করেও তারা ঠেকাতে পারেনি।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির ওই রায়কে ভিত্তি ধরেই ২০১১ সালের ৩ জুলাই জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন বহুল জনপ্রিয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্ত ঘটায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েক দফা হরতাল ডেকেও রাজপথে নেতাকর্মীরা দলীয় এবং সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে। আর কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য সরকার বিরোধী আন্দোলনের হুমকি ধামকি দিলেও কার্যত সরকার বিরোধী কোনো মজবুত আন্দোলন তারা গড়ে তুলতে পারেনি।
কারণ, বিএনপির সিনিয়র নেতারা সব সময় রাজপথের গণআন্দোলনে অংশ না নিয়ে ঘরের মধ্যে বসেই ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল। শুধু কেয়ারটেকার সরকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন নয়, খুন-হত্যা, আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, লুটপাট ও জনদুর্ভোগসহ সরকার বিরোধী আন্দোলনের একাধিক ইস্যু থাকা সত্ত্বেও বড় ধরণের কোনো আন্দোলন তারা গড়ে তুলতে পারেনি।
এমনকি, ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচির দিন গুলশানের বাসায় বালুর ট্রাক দ্বারা অবরুদ্ধ দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্যও ৫‘শ লোকের একটি মিছিল বের করতে পারেনি বিএনপি। জিয়ার সৈনিক আর খালেদা জিয়ার কামান দাবিধারদেরকে সেদিন ঢাকা শহরের কোথাও দেখা যায়নি। ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যম, টিভি টকশো ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিএনপির আন্দোলন, রাজনীতি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিস্ক্রিয়তা নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয়েছে।
বিশেষ করে দলটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভুমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কর্মসূচি ঘোষণার পর মির্জা ফখরুলকে নেতাকর্মীরা একদিনও মাঠে দেখতে পায়নি। এনিয়ে পরে তারেক রহমানও মির্জা ফখরুলকে অনেক শাসিয়েছেন। তৃণমুলের নেতাকর্মীরা তখন কিছু সিনিয়র নেতাকে সরকারের এজেন্ট বলেও আখ্যায়িত করেছেন। এক বাক্যে বলা যায় বিএনপি আন্দোলন করে আজ পর্যন্ত কোনো দাবিই আদায় করতে পারেনি।
আগামীতেও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে বিএনপি কতটুকু আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে এটা নিয়ে জনমনে সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে।
অনেকে বলছেন, মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির কোনো আন্দোলনই সফল হবে না। তারা প্রেসক্লাব আর বিভিন্ন হলরুমে শুধু বকবক করতে পারেন। মাঠে নামার মতো সাহস তাদের নেই। ৫ জানুয়ারির মতো আগামীতেও আওয়ামী লীগ একদলীয় নির্বাচন করলে বিএনপির পক্ষে সেটা প্রতিহত করা কঠিন হয়ে দাড়াবে।
Discussion about this post