অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বহুল আলোচিত বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে চলতি মাসেই রিভিউ করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গতকাল শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়েছেন, রায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার দেয়া পর্যবেক্ষণের কিছু শুধুই বাদ দেয়া নয়, পুরো রায়ের বিরুদ্ধে তারা রিভিউ আবেদন করবেন।
গত ৩ জুলাই হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে রাষ্ট্র পক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। বিচারপতিগণ রায়ের পর্যবেক্ষণে ভিন্ন ভিন্ন মত দিলেও ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ক্ষেত্রে কারো দ্বিমত ছিল না। ৭ বিচারপতির সর্বসম্মতিতেই ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগ।
১ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পরই এনিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দেয়া পর্যবেক্ষণে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার সব দিকই তিনি উল্লেখ করেছেন। সংসদ থেকে শুরু করে টেনে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধকেও। এরপরই প্রধান বিচারপতির ওপর প্রচণ্ড ক্ষেপে যায় সরকার। এক পর্যায়ে তাকে অসুস্থ্য বানিয়ে গৃহবন্দি করে রাখে। সবশেষ তাকে দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে বাধ্য করে সরকার।
এদিকে, রায়ের বিরুদ্ধে সরকার রিভিউ করার ঘোষণা দেয়ার পরই এনিয়ে বিশিষ্টজনসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আলোচনা চলছে। একমাত্র আওয়ামী লীগের লোকজন ছাড়া সবাই প্রধান বিচারপতির দেয়া পর্যবেক্ষণকে সঠিক ও বাস্তব সম্মত বলেই মনে করছেন। এসকে সিনহার দেয়া পর্যবেক্ষণকে সরকারের ব্যর্থতার দলিল হিসেবেও দেখছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ।
এখন সরকার রিভিউ আবেদন করলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা কী করবেন এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, ওয়াহহাব মিঞা এখন এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি। তার সামনে এখন দুইটি রাস্তা খোলা আছে। একটি হলো নিজের পদ ধরে রাখার জন্য সরকারকে খুশী করতে রিভিউ গ্রহণ করে পর্যবেক্ষণ থেকে আওয়ামী লীগের অপছন্দ শব্দগুলো বাদ দেয়া। দ্বিতীয় হলো, বিচার বিভাগ ও এদেশের জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সরকারের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া। তিনি যদি ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে এসকে সিনহার দেয়া পর্যবেক্ষণ বাতিল করেন, তাহলে সেটা হবে তার জন্য আত্মঘাতী। কারণ, এটা বিচার বিভাগ ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে।
কেউ কেউ বলছেন, ওয়াহহাব মিঞা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হওয়ার পরই সরকারকে খুশী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রথম দিনই রাশিয়ার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুব প্রশংসা করেছেন। এর মাধ্যমেই ওয়াহহাব মিঞার মতিগতি অনেকটাই খোলাসা হয়েছে। প্রধান বিচারপতির পদ ধরে রাখতে তিনি এসকে সিনহার দেয়া পর্যবেক্ষণ বাতিল করতেও দ্বিধা করবেন না।
তবে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে তিনি অবৈধ বা স্থগিত করতে পারবেন না বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করার রায়ে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞারও মতামত ছিল। তিনি তখন রায়ের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন নি। এখন তার পক্ষে সেই রায়কে আর অবৈধ বা স্থগিত ঘোষণা করার কোনো এখতিয়ার নেই।
Discussion about this post