অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত জুন মাসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর ছাত্রলীগ-যুবলীগকে দিয়ে হামলা করিয়ে দলের ভেতর ও বাইরে কঠিন চাপে পড়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এনিয়ে তখন খোদ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাও তার ওপর চটেছিলেন। এ ঘটনার পর দলের মধ্যে বেশ কিছু দিন যাবত হাছান মাহমুদ কোনঠাসা অবস্থায় ছিলেন।
গত শনিবার ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। জানা গেছে, যারা হামলা করেছে ও যারা পেছন থেকে সহযোগিতা করেছে তারা সবাই ওবায়দুল কাদেরের অনুসারী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও বলেছেন, খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার নেপথ্য নায়ক ওবায়দুল কাদের। তিনিই ছাত্রলীগ-যুবলীগকে হামলার জন্য লেলিয়ে দিয়েছেন।
অবশ্য রিজভীর এ বক্তব্যের আগেই শনিবার রাতে এনালাইসিসবিডি’র এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করেছে।
এদিকে, হামলার দায়ভার ওবায়দুল কাদের বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করলেও সময় যত যাচ্ছে হামলাকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের পরিচয় ততই বেরিয়ে আসছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ওই দিন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন ফেনীর শর্শদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনী রিয়েল, সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল মোতালেব রবিন, ফেনী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদস্য সবুজ, শর্শদী মিললিয়া মাদ্রাসা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ, ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও যুবলীগ নেতা বেলাল, শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞার গানম্যান যুবলীগ কর্মী সুমন, ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য মানিক, কমিশনার কহিনুর, আওয়ামী লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী নেতা জিতু, আনন্দপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ, শর্শদি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক, বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগ সম্পাদক মো. বাবলু ও ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন মহিন।
আর এদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞা, ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন সাকা, মোটবী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা হারুন উর রশিদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেন্টু, ডালিম, রবিন প্রমুখ।
ইতিমধ্যে রোববার সকালে ফেনী জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায় হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করতে শর্শদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বলে জানান।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে হামলাকারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশের পরও আজ সোমবার এক নতুন তথ্য আবিষ্কার করলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন ফেনীর মোবারক নামে এক দলীয় কর্মীকে নির্দেশ দিয়েছেন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার জন্য। তাদের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডও সাংবাদিকদের শুনিয়েছেন হানিফ।
এঘটনার পর বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন যে, অডিও রেকর্ডের এই কণ্ঠ তার না। এটা ফেনীর ধর্মপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শাহাদাত হোসেন সাকার হতে পারে।
এদিকে, হানিফের প্রকাশিত এই অডিও রেকর্ড নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতি বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ হানিফের এই অদ্ভুত কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন। তারা বলছেন, যারা হামলা করেছে তারা সবাই ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মী। বিএনপি নেতার নির্দেশে তারা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করবে কেন? হানিফের এই বক্তব্য অবাস্তব ও অদ্ভুত। হামলার দায় এড়াতেই হানিফ এখন এমন তথ্য আবিষ্কার করেছেন।
এছাড়া, হানিফের বক্তব্যে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাংবাদিক সমাজ। সাংবাদিকদের কাছে হামলার ভিডিও ফুটেজ ও স্টিল ছবি রয়েছে। ছবি দেখে সাংবাদিকরা হামলাকারীদের পরিচয় বের করেছেন। জড়িত সবাই ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিভিন্ন পদে রয়েছে। এত কিছুর পরও মাহবুব উল আলম হানিফ হঠাৎ করে অডিও রেকর্ড আবিষ্কার করলেন কেন? এনিয়ে সাংবাদিকদের মনেও নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্ন- হামলাকারীরা যদি ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মী হয়ে থাকে তাহলে প্রশাসন তাদেরকে গ্রেফতার করছে না কেন?
Discussion about this post