অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোরপূর্বকভাবে বিদেশে পাঠানোর পর কয়েকদিন ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তারা মনে করেছিলেন সরকারের সংকট কেটে গেছে। কিন্তু অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারের অভ্যন্তরে এখন আরও একাধিক সংকট দেখা দিয়েছে। এনিয়ে আগামীতে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা চরম অস্বস্তিতে আছেন।
জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরেই তিনি তার পদে বসবেন। কারণ, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে সবই আনঅফিসিয়ালি। অভিযোগের তথ্য প্রমাণ সরকার পেশ করতে পারেনি। আর দুদকের মাধ্যমে অভিযোগ তদন্তের যে কথা বলা হয়েছে তাও নিয়ম বহির্ভূত। একজন সিটিং বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা দুদকের নেই। এছাড়া, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও বলেছেন প্রধান বিচারপতি দেশে এসে আবার পদে বসতে পারবেন। আর এনিয়ে সরকারের ওপর ভারতেরও প্রচণ্ড চাপ রয়েছে। সরকার মনে করছে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা আবার চেয়ারে বসলে বড় ধরণের অঘটনও ঘটাতে পারেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল মর্মে ভারতীয় সাংবাদিক সুবির ভৌমিকের রিপোর্টের রেশ কাটতে না কাটতে ভারতের দ্যা টেলিগ্রাফ আরেক রিপোর্ট করে সরকারকে আবার অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ দাবি করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক এবং বর্তমান ২০ জন অফিসার একটি গোপন মিটিং করেছে। এর মধ্যে কমপক্ষে সাবেক ৫ জন সেনা প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, টেলিগ্রাফের এ রিপোর্ট প্রকাশের পর সরকারের অভ্যন্তরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাদের মধ্যে এখন ভয়-আতঙ্কও কাজ করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা সরাজের বৈঠকও সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, সুষমা সরাজের বৈঠকের তালিকায় খালেদা জিয়ার নাম দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার মনে করছে, সুষমা স্বরাজ সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের কথা প্রকাশ্যে বললেও ভেতরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার অন্য কথাও হয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু না হলে খালেদা জিয়া তড়িঘড়ি করে লন্ডন থেকে চলে আসতেন না।
অপরদিকে, নোবেলের আশায় রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে এখন উভয় সংকটে পড়েছে সরকার। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে মর্মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করলেও মিয়ানমারের গণমাধ্যম ইরাবতি জানিয়েছে, এনিয়ে দুই দেশের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। আর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদ যে খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে, চীন আবার তাতে ভেটো দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগ আবারও ভেস্তে যেতে পারে। আর ভারতও এ ব্যাপারে মিয়ানমারকে জোরালোভাবে কোনো চাপ দেবে না। তাই, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদেরকে আর সহজে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনাও কমে আসছে। এই ৮ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে এখন বড় দুশ্চিন্তায় আছে সরকার। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, আগত রোহিঙ্গারা সরকারের জন্য বড় ধরণের সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার এখন চতুর্মুখি সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে। তাদের চোখে-মুখে এখন ক্ষমতা হারানোর ছাপ দেখা যাচ্ছে। ভয়ে-আতঙ্কে তারা এখন ভবিষ্যত পরিণতির চিন্তা করছে।
Discussion about this post