বিভিন্ন সরকারের আমলে বিচারপতিদের নিয়ে বারবার খেলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের এক যৌথ সভার সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। সভায় আওয়ামী লীগের প্রায় সব শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের মনে আছে যে উচ্চ আদালতের বিচারকদের বয়স আমাদের সংবিধানে ৬২ ছিল, সেটাকে ৬৫ করা হয়েছিল। এরপর আবার সেটাকে কমিয়ে দিয়ে ৬৫ থেকে ৬২ করে দিয়ে বিচারকদের বিদায়ের ব্যবস্থা করা হয়। বারবার এ ধরনের খেলা হয়েছে।’ এ তিনি আরও বলেন, এজলাসে প্রধান বিচারপতি বসে আছেন, পত্রপাঠ তাঁকে বিদায় দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একজন বিচারপতিকে রাষ্ট্রদূতের চাকরি দিয়ে দেশের বাইরে পাঠানো হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী তিন সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে ৭ অক্টোবর দেশে ফেরেন। অসুস্থতার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকসহ বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি কর্মসূচিতে অংশ নেননি। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপ সামনে রেখে আজ গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন। ১৮ অক্টোবর ইসির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বিচার বিভাগের অতীত বলতে গিয়ে বলেন, ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকার যত বিচারক নিয়োগ দিয়েছিল, পরে তাঁদের ১০ জনকে পত্রপাঠ বিদায় করে দেওয়া হয়। এরপর একবার ছয়জন, আবার আরও কয়েকজনকে বিদায় দেওয়া হয়। অবশ্য পরে রিট আবেদন করে কয়েকজন চাকরি ফিরে পান। বিএনপি আমলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বানানো যায়। তিনি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি যাতে প্রধান উপদেষ্টা হয়ে তাদের ভোট চুরির সুযোগ করে দেন, সে জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেনা-সমর্থিত সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের উদাহরণ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তখন আমরা দেখলাম, একজন বিচারপতিকে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন ডেকে নিয়ে এক কাপ চা খাইয়ে বললেন, আপনি পদত্যাগ করেন।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু সভা শেষে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান বিচারপতির বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য না করতে নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, যা হওয়ার আইন অনুযায়ী হবে।
সভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে বলেন, ‘ভবিষ্যতে যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ হয়, আমরা সেটাই চাই। জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত করে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া আমাদের লক্ষ্য। আমাদের সরকারের আমলে যতগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন, উপনির্বাচন হয়েছে, সব কটিই খুব স্বচ্ছভাবে হয়েছে। যে দলকে মানুষ ভোট দিয়েছে, সে দলের প্রার্থীরাই নির্বাচিত হয়েছেন। এভাবে যেন আগামী জাতীয় নির্বাচন হয়, তার ব্যবস্থা করাই আমাদের লক্ষ্য।’
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post