অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে দলের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় ১৪ জন নেতা কারাগারে যাওয়ায় হঠাৎ রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। রাজপথে কঠোর কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে তারা। শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বুধবারের (১১ অক্টোবর) ঘোষিত বিক্ষোভে রাজপথে নেতাকর্মীদের সক্রিয় উপস্থিতি ছিল। এর রেশ দেখা যেতে পারে বৃহস্পতিবারের (১২ অক্টোবর) সকাল-সন্ধ্যা হরতালেও।
এদিকে শীর্ষ নেতৃত্ব গ্রেফতারের পর দলের নতুন দায়িত্বে যারা এসেছেন, তাদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দক্ষতার কারণেও সন্তুষ্টি রয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে।
গত দু’দিনে জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হলেও নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়নি জামায়াতকে। সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলোতে ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব নিয়োগ করা নিয়ে নানা জটিলতা থাকলেও জামায়াতে ইসলামী মাত্র একদিনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল পদে কোনও ঝামেলা ছাড়াই নিয়োগ দিতে পেরেছে।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার একাধিক সদস্য জানান, পদের ধারাবাহিকতা থাকায় নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতা হয় কম। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ বা কেন্দ্রীয় কমিটির সিরিয়াল অনুযায়ী নতুন ভারপ্রাপ্তরা দায়িত্ব পেয়েছেন। নতুন ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সাবেক সংসদ সদস্য এবং রাজনৈতিকভাবে পরিচিতও। রাজনৈতিক মহলে তার পরিচিতি আছে। আর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম সাংগঠনিকভাবে পরিচিত এবং দক্ষ। রাজনৈতিক মহলে তার পরিচিতি না থাকলেও সংগঠক হিসেবে দলে যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জামায়াতের প্রধান নির্বাচন পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কয়েকটি এলাকার কয়েকজন জামায়াত নেতারা জানান, শীর্ষনেতারা গ্রেফতার হওয়ার প্রতিবাদ হিসেবে হরতাল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাজপথে কঠোর আন্দোলন যেমন হবে তেমনি দলের কার্যক্রম সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর দিকেও নজর থাকবে। নেতাদের বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। জামায়াত ও সাবেক শিবিরের নেতারাও রাজপথে কঠোর আন্দোলনের পরামর্শ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে ফেনী জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য একেএম শামসুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হবে। আজকে (বুধবার) আমরা হরতালের সমর্থনে লিফলেট বিতরণ করেছি এবং অহিংস পিকেটিং করেছি।’
দলটির বিভিন্ন সূত্রের খবর, নির্বাচনকালীন সরকার-ব্যবস্থার সুরাহা হওয়ার পরও রাজপথে কঠোরভাবে নামবে জামায়াত। দলটির কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্যরা জামায়াতের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও পেশাজীবীদের মধ্যে দলীয় কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। প্রায় শেষ হতে যাওয়া জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার ‘অধিবেশনে’ দেওয়া সদস্যদের অভিমতের ভিত্তিতে তৈরি বার্ষিক পরিকল্পনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকাসহ সারাদেশের অন্তত ৬জন মজলিসে শুরার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় শুরা অধিবেশনে বিগত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক হিসাব, আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনার ধরন ও কার্যক্রমের কৌশলের ওপর প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে।
জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বছরে অন্তত দুই বার দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সাধারণ অধিবেশন করতে হবে। যদিও পরিবেশ প্রতিকূলে থাকায় অঞ্চলভেদে শুরা সদস্যরা লিখিতভাবে তাদের অভিমত পাঠিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রে।
উল্লেখ্য, সারাদেশে জামায়াতের মজলিসের শুরার সদস্য-সংখ্যা তিন শতাধিক। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার মেয়াদ তিন বছর।
এদিকে কেন্দ্র ঘোষিত বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যার সর্বাত্মক হরতালের সমর্থনে রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াতে ইসলামী। বিভিন্নস্থানে তারা পিকেটিংও করেছে। মিরপুরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে সংঘর্ষও হয়েছে। মিছিলগুলো থেকে কালকের হরতাল কঠোরভাবে পালনের জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
Discussion about this post