অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির মকবুল আহমাদ ও সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানসহ দলটির ৯ কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে আজ সন্ধ্যায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সময় চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর এবং দলের নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির ও সেক্রেটারিকে গ্রেফতার বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় একটি ঘটনা। এর আগে গত কয়েক বছরে জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী ও কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ কেন্দ্রীয় ৫ নেতাকে ৪০ বছরের পুরনো কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসি দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর অনেক দিন ধরেই পরিস্থিতি অনেকটাই শিথিল যাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই সরকার জামায়াতের উপর ফের খড়গহস্ত হলো।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদসহ ৮ নেতাকে।
হঠাৎ করে জামায়াতের উপর আওয়ামী লীগ সরকারের খড়গহস্ত হওয়াকে অনেকেই স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না। অনেকে এটাকে প্রতিবেশি দেশ ভারতের মন যোগানোর সরকারি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। এটা একটা ওপেন সিক্রেট ব্যপার যে বাংলাদেশের ক্ষমতায় যে কারো থাকা না থাকাটা অনেকটাই প্রতিবেশি এই প্রভাবশালী দেশের চাওয়া না চাওয়ার উপর নির্ভর করে।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতের সাথে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মনোমালিন্য শুরু হয় চীন থেকে দুটি সাবমেরিন কেনার পর থেকেই। এটা নিয়ে ভারত ব্যপক পরিমানে ক্ষুব্ধ হয় তখন। তাদের মতে বাংলাদেশের ওরকম কোনো শত্রু দেশ নেই, তাহলে তারা সাবমেরিন দিয়ে কি করবে? কোন দেশের বিরুদ্ধে এটা ব্যবহার করবে? তাদের প্রতিবেশি বলতে গেলে তো কেবল ভারতই। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভারতের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ায় আরেক দফা ভারতের ক্ষোভের মুখে পড়ে বর্তমান সরকার।
ভারতের ক্ষোভের কিছুটা প্রমান মিলে শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরদিনই সুবীর ভৌমিককে দিয়ে ছড়ানো হাসিনার কথিত হত্যাচেষ্টার কাহিনী প্রচার ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সেটাকে নাকচ করার ঘটনা থেকে। সুবীর ভৌমিকের এসব কর্মকাণ্ডের পিছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর হাত রয়েছে বলেই মনে করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের উপর ভারতের ক্ষোভের আরেকটি বহি:প্রকাশ ঘটেছে বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের সাবেক কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী তীর্যক কিছু মন্তব্যে। গত ৫ অক্টোবর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস নিয়ে বিবিসিকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেন- ‘চায়না (চীন) ওদের (বাংলাদেশের) বিশেষ বন্ধু হয়েছে এখন। চায়না কে জিজ্ঞেস করুক। ওরা কিছু করুক। যখন দরকার হয় তখন তো চায়নার কাছে ছুটে যা ওরা (বাংলাদেশ)। … কিছু রোহিঙ্গা চায়না নিয়ে নিক না।’
এদিকে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ষোড়শ সংশোধনী বাতিল বিষয়ে নজিরবিহীন আলোচিত এক রায় প্রদান করে। যেই রায়ে সরকার ও আওয়ামী লীগ ব্যপকভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে প্রধান বিচারপতির উপর। যার প্রতিশোধ হিসেবে সরকার এস কে সিনহাকে জোরপূর্বক নির্বাসনে পাঠানোর সব ব্যবস্থাও করে ফেলেছে ইতোমধ্যেই। কিন্তু প্রধান বিচারপতিকে থামানো গেলেও স্বস্তিতে নেই সরকার। কেননা প্রধান বিচারপতি একা একাই এসব করেননি। সেই সাহস বা সামর্থও তার নাই। তিনি যে ‘র’ এর ইন্ধনে এসব করেছেন সেটা সরকার খুব ভালোভাবেই জানতে পেরেছে।
এতসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার সত্যি সাত্যিই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীত হয়ে পড়েছে। কারন প্রতিবেশি দেশটির সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় থাকা একপ্রকার অসাধ্য। বিশেষ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেটা আরো বেশি অসাধ্য হয়ে পড়েছে। কারন সরকারের ছত্রছায়ায় ইতোমধ্যে ‘র’ প্রশাসনের সর্বত্র ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। এজন্য আওয়ামী লীগ এখন ভারতকে বাগে আনতে যারপরনাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
ভারতের মন পেতে আওয়ামী লীগ কতটা পেরেশানিতে আছে সেটা বুঝা যাচ্ছে সম্প্রতি ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য থেকে। গত ৬ অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লিতে শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে ভারতের কাছ থেকে তারা এধরনের সহযোগিতাই আশা করেছিলেন। এ ব্যপারে ভারতের ভূমিকায় বাংলাদেশ খুশি।’ অথচ দুদিন আগেও রোহিঙ্গা বিষয়ে ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করেছে বাংলাদেশ সরকার।
নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে প্রতিবেশি দেশের মন যোগাতে গিয়ে জামায়াতকে টার্গট করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বাংলাদেশকে পুরোপুরিভাবে গ্রাস করার ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকেই একমাত্র বাধা হিসেবে মনে করে ভারত। আর আওয়ামী লীগ মনে করছে জামায়াতকে নির্মুল করলেই হয়তো ভারতের মন পাওয়া যেতে পারে। তাই জামায়াতের উপর শেখ মরণকামড় মারতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারই ফলস্রুতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমির-সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পাগলপ্রায় আওয়ামী লীগের আরো অনেক ধ্বংসাত্মক ও আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডই হয়তো সামনের ক’দিন ধরে দেখতে পাবে দেশবাসি।
Discussion about this post