অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে গত দু’মাস ধরে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে ক্ষমতাসীনদের হুমকী ধামকী ও দাবি তোলার মধ্যেই গত ২৩ আগস্ট বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছিলেন- ‘বিচারপতি এস কে সিনহাকে ‘অসুস্থ বানিয়ে’ প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরানোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে’। একমাস পর বিএনপির সেই আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হলো।
সেদিন বক্তব্যে রিজভী বলেছিলেন- “ওই রায়ের কারণে সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে, প্রধান বিচারপতিকে মানসিক অসুস্থ বলে অন্য কোনো ধরনের অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এগোয় কি না, সেটা আজকে মানুষের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তাকে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সরিয়ে, এটা অজুহাত সৃষ্টি করে যে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ তাকে আর রাখা যাবে না- এই বলে কোনো উদ্যোগ তারা গ্রহণ করে কি না, সেই আলোচনা হচ্ছে।”
সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে আছে- “প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাহার দায়িত্বপালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমত অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।”
বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরত নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন আনা হয়েছিল, যা সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে এনেছে।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার এই রায়কে ঐতিহাসিক বলছে বিএনপি। রায় বদলাতে সরকার বিচার বিভাগকে চাপ দিচ্ছে বলেও তাদের অভিযোগ।
অন্যদিকে এই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি সিনহা বাংলাদেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। যেটা বর্তমান সরকারের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন ও দুর্নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় প্রধান বিচারপতির উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে আওয়ামী লীগ। তারা প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের জন্য হুমকী-ধামকী ও তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ারও ঘোষণা দেয়।
তারই প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির এমন রহস্যজনক ছুটি চাওয়াটা জনমনে ব্যপক সন্দেহের উদ্রেক করেছে। সবাই মনে করছেন সরকার জোরপূর্বক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে ছুটিতে পাঠিয়েছেন। যেটা বিএনপি অনেকদিন ধরেই আশঙ্কা করে আসছিলো।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার হঠাৎ করেই এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সংবাদ মাধ্যমগুলোকে জানালেন- প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের জন্য ছুটি চেয়েছেন। এই সংবাদের পর পরই রাতের মধ্যেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের জেষ্ঠ্য বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়াকে নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও আইনজীবি সমিতির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে- প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার হঠাৎ ছুটিতে যাওয়ার ব্যপারটি রহস্যজনক এবং নজিরবিহীন। এমনকি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদিন বলেছেন- এস কে সিনহা খবর পাঠিয়েছেন তিনি ছুটি চাননি, তাকে জোরপূর্বক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সত্যি সাত্যিই এস কে সিনহা ছুটি চেয়েছেন কিনা সেটা জানাও সম্ভব হচ্ছে না। কারন প্রধান বিচারপতিকে অনেকটা গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তার বাসায় মিডিয়া কিংবা কাউকেই যেতে দেয়া হচ্ছে না।
Discussion about this post