দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, “আমরা আসলে কেউ স্বাধীন না। সরকার স্বাধীন না, আপনিও স্বাধীন না, আমিও স্বাধীন না।”
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে পাঁচবছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনার চলমান কার্যক্রমের বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ইকবাল মাহমুদ এ কথা বলেন।
দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বলে সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় ইকবাল মাহমুদ বলেন, “আমরা আসলে কেউ স্বাধীন না। সরকার স্বাধীন না, আপনিও স্বাধীন না, আমিও স্বাধীন না। স্বাধীন মাত্র জনগণ। জনগণকে একটা প্লাটফর্ম দেয়ার চেষ্টা করেছি যে, আপনারা অভিযোগ করেন। তবে এটা সত্য যে জনগণ জানে না, দুর্নীতি দমন কমিশন কোন কোন বিষয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা রাখে।”
কেউ পদে থাকা অবস্থায় কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ধরার জটিলতার কথাও জানালেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান।
দুদক চেয়ারম্যান ও সাবেক এই সচিব বলেন, “আমি যখন ক্ষমতায়, আমার দুর্নীতি এখন আপনি খুঁজে বের করতে পারবেন না। ইটস ভেরি ডিফিকাল্ট। উদাহরণ সরূপ, একজন কর্মকর্তা, যিনি ক্ষমতায় আছেন, তিনি যে কাজটা করছেন, উনি ঠিকই ফাইলটা উনার আওতায় রেখে দিচ্ছেন। আপনি যতই রিপোর্ট করেন না কেন, এই ফাইল বের করা এত সহজ না।”
এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “দুদককে সরকার সহযোগিতা করছে, মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বিভাগ সহযোগিতা করছে।”
‘তবে একটা গোপন কথা বলি’ বলার পর পদধারীদের ধরতে সমস্যার কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্নীতির তথ্য পেতে অসহযোগিতার কারণে বহু সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে মামলা করা হয়েছে।
দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে দুদক আগের চেয়ে ‘অনেক সতর্ক’ বলেও জানান ইকবাল মাহমুদ।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “সবগুলো অভিযোগ আমরা নিতে পারি না। কর্মকর্তাদের বলেছি, যেগুলো নেবেন, সেগুলো যেন সঠিক হয়, এত বেশি নেয়ার দরকার নেই। এখন আমাদের অনেক অফিসে মামলা কম। আগে যেভাবে নোটিশ দেয়া হত, ঢালাওভাবে, একটি মামলা এসেছে- দাও ২০ জনকে নোটিশ। দুর্নীতি হয়েছে? ১০০ জনকে ডাক! এখানে নিয়ে আস। কিন্তু আমরা এখানে ডাকি খুব কম, আমরা যাই।”
এখনও ‘প্রচুর দুর্নীতি’ রয়ে গেছে স্বীকার করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, “প্রত্যেক জায়গাতে দুর্নীতি। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় আমরা কিছুটা এগিয়েছি, দুর্নীতি হয়ত কিছুটা কমেছে। আমরা লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছি।”
গত জুলাইয়ে দুদক ১০৬ হটলাইন চালু করে জনগণ থেকে সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগ শুনছেন। হটলাইন চালু হওয়ার পর থেকে দুই লাখের বেশি ফোন কল এসেছে বলে দুদক চেয়ারম্যান জানান।
তিনি বলেন, হটলাইনে দুই লাখের বেশি কল এলেও মাত্র ৩৫টি ঘটনায় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সব ফোন রিসিভ করা যায়নি। যদিও আমাদের পাঁচজন কর্মকর্তা সেখানে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রবীন সাংবাদিক রাহাত খান, একুশে টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, দৈনিক যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দিন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক হারুন অর রশিদএকাত্তর টিভির প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডিবিসি নিউজের মঞ্জুরুল ইসলাম।
সূত্র: শীর্ষনিউজ
Discussion about this post