বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার কথা বলেননি, নিন্দাও জানাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ফখরুল এ অভিযোগ করেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘দশম কারামুক্তি দিবস’ উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এ সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর যে গণহত্যা হয়েছে তা তিনি বললেন না। জাতিসংঘে তিনি এই গণহত্যার নিন্দাও করেননি, তিনি মূল জায়গাটিতেই যাচ্ছেন না।’
বিএনপির শীর্ষস্থানীয় এই নেতা আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে প্রস্তাব দিয়েছেন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলকে সেইফ জোনে রূপান্তর করার, সেইফ জোনের মানে কি বাংলাদেশকে আরেকটি প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রে পরিণত করতে চান?’ তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমার বাংলাদেশের স্বাধীনতার ওপর আগ্রাসন চালিয়েছিল রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠিয়ে। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ছোট ও খর্ব করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে ভাষণে বলেছেন দেশের উন্নয়নের কথা, শান্তি স্থাপনের কথা কিন্তু যেখানে দেশের জনগণের নিরাপত্তা নেই, ছেলে হারায় বাবাকে, মা হারায় সন্তানকে, হত্যা, গুম, খুন সে দেশে শান্তি স্থাপন কী করে হলো?’
ফখরুল আরো বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির দরকার, পুরো জাতিকে এক না করলে সমস্যার সমাধান অসম্ভব হবে। জাতিকে এক করে যদি মিয়ানমারকে বলেন যে, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে, তাদেরকে নিতে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা হবে। ঐক্য ছাড়া আপনার (প্রধানমন্ত্রী) হাতও শক্তিশালী হবে না। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের অধিকার দিয়ে সসম্মানে ফিরিয়ে নিতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার জনসমর্থন হারিয়েছে, এ জন্য একনায়কত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে। অনেক সময় বয়ে গেছে, সংঘাতে না গিয়ে আসুন, সংলাপের মাধ্যমে পথ তৈরি করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রকৌশলী মো. ফখরুল আলম, সঞ্চালনা করেন এ বি এম রুহুল আমিন আকন্দ।
প্রসঙ্গত, আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোর পৌনে ৬টায় জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া ঠেকানোর জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সীমানা বরাবর স্থলমাইন পুঁতে রাখছে। এতে আমরা ভীষণভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এসব মানুষ যাতে নিরাপদে ফিরে যেতে পারে, এখনই তার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে আমি সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করছি। এ বিষয়ে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি মেনে চলে।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সকলেই জানেন যে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান নৃশংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থার ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। এই নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আন্তর্জাতিক আভিবাসন সংস্থার তথ্যমতে গত তিন সপ্তাহে চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে পাঁচটি প্রস্তাব দেন। সেগুলো হলো :
প্রথমত, অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা;
দ্বিতীয়ত, অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল (Fact Finding Mission) প্রেরণ করা;
তৃতীয়ত, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করা এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষাবলয় (safe zones) গড়ে তোলা;
চতুর্থত, রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা;
পঞ্চমত, কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।’
সূত্র: এনটিভি অনলাইন
Discussion about this post