সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার করণীয় রয়েছে, তবে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা নির্বাচন কমিশনের। তবে নির্বাচনকালে সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে সবচেয়ে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষেও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট করণীয়’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই হবে না, নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হবে। এই বিধান রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সবার জন্য সুযোগ নিশ্চিত করা দুরূহ হবে। আর সে ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে সুদূরপরাহত।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, প্রশাসনের রাজনীতিকরণ, নির্বাচন কমিশন গঠন, নিরাপত্তা ইস্যুতে যত দিন পরিবর্তন না আসবে, তত দিন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন প্রায় অসম্ভব। কেননা বাজেটের ৭৫ শতাংশ ব্যয় হয় নিরাপত্তা খাতে।
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। ভোটার তালিকা যদি সঠিক না হয়, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস যদি সঠিক না হয়, ভোটাররা যদি প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য না পান, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্ভুল ভোটার তালিকা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রধানতম পূর্বশর্ত।
লেখক, গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সবার অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে, তা তাদেরই অনুধাবন করতে হবে এবং সবাইকে তা জানাতে হবে। তিনি নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পাশাপাশি ইসিকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপ করার পরামর্শ দেন।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রশ্ন রাখেন, নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন নির্বাচন কমিশন যদি যাচাই-বাছাই না করে তাহলে তারা এটা জমা নেয় কেন?
মূল প্রবন্ধে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ২০১৩ সালের নির্ধারিত সীমানার ভিত্তিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে বাধ্য। তিনি বলেন, ‘এটি সুস্পষ্ট যে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে। তবে নির্বাচনকালে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করলে এবং কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না দিলে, সবচেয়ে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব।’
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post