রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে আগামীকাল বৈঠকে বসছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো নৃশংসতায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ বৈঠক আহ্বনা করেছে বৃটেন ও সুইডেন।
এ খবর দিয়েছে আয়ারল্যান্ডের জাতীয় টেলিভিশন ও রেডিও সম্প্রচার বিষয়ক ওয়েবসাইট আরটিই।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বৃটেনের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত ম্যাথিউ রাইক্রোফট রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আগামীকালের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক নিয়ে বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে কি অবর্ণনীয় অবস্থা চলছে তাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা কি পরিমাণে উদ্বিগ্ন সে বিষয়টি ফুটে উঠেছে এতে। ওই সব রোহিঙ্গা পালিয়ে রাখাইন ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকারের নৃশংস অত্যাচারকে জাতিসংঘ ‘জাতি নির্মূল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক সভ্যতায় একটি জাতিকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে অং সান সুচির সরকার।
সোমবার পাওয়া জাতিসংঘের তথ্য মতে, ২৫ শে আগস্ট সহিংসতা শুরুর পর কমপক্ষে তিন লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে।
সোমবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জায়েদ রাদ আল হোসেন মিয়ানমারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর ‘সিস্টেম্যাটিক আক্রমণ’ চালাচ্ছে মিয়ানমার। তিনি এটাকে জাতি নির্মূল বা এথনিক ক্লিনজিং বলে আখ্যায়িত করেন।
হোয়াইট হাউজ থেকেও রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ পরিণতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলেছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাস্তুচ্যুত হওয়া দেখে বোঝা যায়, সেখানকার নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা বেসামরিক সাধারণ মানুষদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না।
হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা আইনের প্রতি সম্মান দেখাতে, সহিংসতা বন্ধ করতে ও সব সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া বন্ধের জন্য মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই।
উল্লেখ্য, এর আগে আগস্টের শেষের দিকে মিয়ানমারের এই ভয়াবহ সহিংসতা নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তবে তারা তখন কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয় নি।
জাতিসংঘের কূটনীতিকরা বলছেন, আগামীকাল রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে জাতিসংঘের শীর্ষ এই সংস্থা যখন জরুরি বৈঠক ডেকেছে তাতে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে চীন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের জন্য মিয়ানমারকে খুব বেশি প্রয়োজন চীনের। তা ছাড়া তাদের অস্ত্রের বড় বাজার রয়েছে মিয়ানমারে। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে যখনই জাতিসংঘে যাওয়ার আলোচনা উঠেছে ঠিক তখন থেকেই মিয়ানমার কূটনৈতিক দুতিয়ালি শুরু করেছে। তারা চীন ও রাশিয়াকে হাতে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে রিপোর্ট বেরিয়েছে।
তাতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘে রোহিঙ্গা ইস্যুতে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যদি কোনো উদ্যোগ গৃহীত হয় বা হওয়ার আলামত দেখা দেয়, তা বন্ধ করে দিতে বা সেই উদ্যোগে ভেটো দিতে চীন এবং রাশিয়াকে প্রলুব্ধ করেছে বা করছে মিয়ানমার। তারই ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতিসংঘের কূটনীতিকরা।
এরই মধ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। অং সান সুচির প্রতি সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড থেকে তাকে দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দালাই লামা, দক্ষিণ আফ্রিকার আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু । তারা সহ পাকিস্তানের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে, নিন্দা জানাতে আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র: মানবজমিন
Discussion about this post