অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কট্টর আওয়ামী লীগ পন্থি তিনটি ও আরো একটি গণমাধ্যম ছাড়া অন্য গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হক। খবর যুগান্তরের।
সরকারপন্থি চারটি গণমাধ্যম হলো- কট্টর আওয়ামী লীগপন্থি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর, আওয়ামী লীগের মুখপত্র দৈনিক জনকণ্ঠ, কট্টর আওয়ামী লীগ ও বামপন্থি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও ইসলামি ভাবধারা বিরোধী দৈনিক প্রথম আলো।
বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে তার আহ্বানে গণমাধ্যমের কর্মীরা আইন কমিশনের কার্যালয়ে গেলে চারটি গণমাধ্যমকে রেখে বাকিদের সামনে কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন তিনি।
খায়রুল হক বলেন, আমি দুঃখিত। এই চারটি ছাড়া বাকিদের (সংবাদকর্মী) সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি না।
তিনি বলেন, জনকণ্ঠের স্বদেশ বাবু আমাকে অনুরোধ করলেন, আমি ওকে (ফারজানা রুপা) বললাম ওরা কি থাকতে পারে। প্রথম আলো বলেছে, আমরা আগের সংবাদ সম্মেলনে থাকতে পারি নাই। তাই প্রথম আলোকে আজ থাকতে বলেছি। ওদেরকে থাকতে বলেছি রুপার অনুমতি নিয়ে। এখানে আর কারো থাকার সুযোগ নেই। আমি দুঃখিত।
এর আগে গত ৯ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিল নিয়ে আইন কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আপিল বিভাগের রায় অপরিপক্ক, পূর্বপরিকল্পিত ও অগণতান্ত্রিক। এ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমপিদের অপরিপক্ক বলা হয়েছে, যেটা বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এ রায়ের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের হেয় করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি কি প্রধান শিক্ষক, আর অন্য বিচারপতিরা ছাত্র নাকি যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে (প্রধান বিচারপতি) অন্য বিচারপতিদের পরিচালনা করতে হবে? সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুসারে বিচারপতিরা সবাই স্বাধীন।
তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে সংবিধানের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনতে হলে আবারও সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধানে যেহেতু সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ছিল না, সেহেতু এটা রাখা সংবিধান পরিপন্থী।
খায়রুল হকের এমন মন্তব্যে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। বিএনপিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে খায়রুল হককে আওয়ামী লীগ সরকারের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বিভিন্ন স্থানে তার গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশও হয়। ড. আসিফ নজরুল খায়রুল হকের বক্তব্যের জবাবে বলেছিলেন, ‘একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি হয়ে তিনি বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে কটাক্ষ করেছেন, তার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তার অভিযোগ বর্তমান প্রধান বিচারপতি ষষ্ঠদশ সংশোধনী মামলায় অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিয়েছেন। অথচ তিনি নিজে তার বিভিন্ন রায়ে বহু অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করেছেন, বহু রাজনৈতিক বিষয়ে অযাচিত বক্তব্য দিয়েছেন। ষষ্ঠদশ সংশোধনী মামলায় আপীলেট ডিভিশনের সাতজন বিচারপতি সর্বসম্মতিতে রায় দিয়েছেন। এ রায়কে বিচারপতি খায়রুল হক পূর্বপরিকল্পিত ও অগনতান্ত্রিক বলেছেন। এত বড় আদালত অবমাননামূলক বক্তব্য একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি কিভাবে দিলেন?’
উল্লেখ্য, গত ১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। গত ৩ জুলাই বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিল করে দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। তবে হাইকোর্টের রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল সর্বসম্মতভাবে খারিজ করার রায় ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি।
Discussion about this post