জুনায়েদ আব্বাসী
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ বাংলাদেশে এক মহামারি আকার ধারণ করেছে। এমন কোনো দিন বাদ যায়নি যে সংবাদপত্রে ৪-৫টি ধর্ষণের ঘটনার নিউজ প্রকাশিত হয়নি। বেশির ভাগ ধর্ষণের ঘটনার নিউজই সংবাদপত্রে আসে না। সামাজিক মর্যাদা হানিসহ বিভিন্ন কারণে ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেয়া হয়। আর সংবাদপত্রে যেসব ঘটনা প্রকাশিত হয়, তাও এখানে সীমাবদ্ধ থাকে। হয়তো বড়জোর মামলা হয়। এসব ঘটনার বিচার হয়েছে এমন রেকর্ড নেই বললেই চলে।
আর সম্প্রতি সারাদেশে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে এসব ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাই জড়িত বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এসব ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও সরকারি দলের লোক হওয়ায় খুঁটির জোরে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।
অতিসম্প্রতি বরিশালে এক ছাত্রলীগ নেতা স্বামীকে বেঁধে তার নববধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলেও দল থেকে বহিষ্কার করে দায় এড়িয়ে গেছে ছাত্রলীগ। কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে ধারাবাহিক ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
আর সর্বশেষ বগুড়ায় তুফান সরদার নামে এক শ্রমিকলীগ নেতা কর্তৃক এক ছাত্রীকে ধর্ষণের পর ওই মেয়ে ও তার মাকে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতনের পর তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে।
ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার মা-মেয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসির কাছে শ্রমিকলীগ নেতা তুফান ও তার ক্যাডার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘রিমান্ডে নিয়া মানুষকে যেইভাবে মারে, সেইভাবে একটা ঘরে আটকাইয়া রাইখা ওরা মারছে আমার মেয়েরে এবং আমারে। ক্ষমতার জোরে ওরা আমাদের ওইভাবে মারছে। অনেক মারছে তারপর চুল কাইটা দিছে।’
বগুড়ার এ ঘটনায় আবারো সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখার পর এনিয়ে মানুষ প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
গনজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘শ্রমিক লীগ সভাপতি সদ্য স্কুল শেষ করা একটি মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে এনে ধর্ষণ করেছে। প্রতিবাদ করায় মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দিয়েছে। এরপরও মুখ বন্ধ না করলে এসিড মারার হুমকী দিয়েছে। আওয়ামী লীগ কি আমাদের মধ্যযুগে নিয়ে যাবার পণ করেছে নাকি? আমি তো পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশ এখন মধ্যযুগের মহাসড়কে! এই ঘটনা মধ্যযুগকেও হার মানায়! আমরা কি আজ এতোটাই বিকারহীন যে, এই ঘটনাও আমাদের নাড়া দিতে পারছে না?’
কেউ কেউ বলছেন, দেশের শেয়ারবাজার, ব্যাংক ও বিভিন্ন সেক্টর থেকে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুট শেষে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা এখন নারীদের দেহ লুট শুরু করেছে। ৭১ সালে পাকিস্তানিরা যা করেনি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখন তা করছে। এরপর যে তারা কী করবে সেটা আল্লাহ-ই ভাল জানেন। এদেরকে এখনই না রুখলে দেশ সত্যি সাত্যি মধ্যযুগে চলে যাবে।
Discussion about this post