অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির দায়ে অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হলো নওয়াজ শরিফকে। পানামার ল’ ফার্ম মোস্যাক ফনসেকার বিপুল সংখ্যক নথি ফাঁসের পর বিশ্বজুড়ে তা নিয়ে তুমুল আলোচনার ঝড় উঠেছিল। এতে অনেক রাষ্ট্রনেতারও অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচারের চিত্র প্রকাশ পায়। দি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট (আইসিআইজে) বিশ্বের ২১টি অঞ্চলের তিন লাখেরও বেশি অফশোর কোম্পানির তথ্যের একটি ডেটাবেইস প্রকাশ করেছিল। সেই তালিকায় নাম ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারের সদস্যদের।
পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির মামলায় পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার চূড়ান্ত রায়ে নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেছে। সুপ্রিমকোর্টের এই রায়ের পরই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান নওয়াজ শরিফ।
এনিয়ে এখন বিশ্বব্যাপী চলছে তুমুল আলোচনা। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশটির সুপ্রিমকোর্টের রায় এবং রায় মেনে নিয়ে নওয়াজ শরিফের পদত্যাগে দেশটির আইনের শাসন সারাবিশ্বে আবারো প্রশংসিত হয়েছে।
যেই পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হলো নওয়াজ শরিফকে, সেই পানামা কেলেঙ্কারিতে প্রায় অর্ধশতাধিক বাংলাদেশির নামও প্রকাশিত হয়েছিল। এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা কাজী জাফরউল্যাহ ও তার স্ত্রী নীলুফার জাফরউল্যাহর নামও রয়েছে। জাফরউল্যাহ ও নীলুফারকে ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডে নিবন্ধিত পাথফাইন্ডার ফিন্যান্স এবং হ্যানসিটিক লিমিটেডের পরিচালক বা অংশীদার হিসেবে দেখানো হয়েছে। আর অন্যরাও কোনো না কোনোভাবে সরকারি দলের সাথে যুক্ত। তারা বিভিন্ন অফসোর কোম্পানির নামে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন বলে বলা হয়েছে পানামা পেপার্সে।
এছাড়া অন্য সব ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে আছে সামিট গ্রুপ পরিবারের পরিচালকরা। তারা অফসোর কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা নিতে নিজেদেরকে ডাইরেক্টর বা শেয়ারহোল্ডার দেখানোর চেয়ে নমিনি হিসেবে দেখিয়েছে।
পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশিদের নাম আসার পরই তখন এনিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের পক্ষ থেকে তাদের বিচারের দাবিও জোরালো হয়।
বিশিষ্টজনরা বলছিলেন, এতদিন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, লুটপাট করে দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশ টাকার পাহাড় বানানো হচ্ছে। এবার সেটা সবাই সত্য বলে জানতে পেল। যারা এভাবে দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে তাদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং সরকারের দলের লোকেরাই এমন বিশাল লুটপাট ও চুরি করছে বলেও কেউ কেউ মনে করেন।
জনগণের দাবির মুখে পানামায় নাম আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন একবার তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু, হঠাৎ করে কী এক অজানা কারণে দুদকের তদন্ত থমকে যায়।
সাধারণ মানুষ মনে করছেন, পানামা পেপার্সে নাম আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করলে সরকারের অনেক রাঘব বোয়ালদের নামও বেরিয়ে আসতে পারে। এজন্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে না। কিন্তু পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর এই বিষয়টি আবারও জনসম্মুখে এসেছে, পাশাপাশি দাবি উঠেছে অভিযুক্ত বাংলাদেশিদের বিচারেরও।
Discussion about this post