জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, এই সরকার পরিবর্তনের সময় এসে গেছে। দেশের মানুষ আর বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা পরিবর্তন চায়। জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি আচরণের জন্য দেশ বিপদগামী হচ্ছে। তাদেরকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে। ভারত এক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিকে সব ধরনের সহায়তা করবে। দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশী বন্ধুরাও বাংলাদেশে জাতীয় পার্টির সরকার দেখতে চায়।
আজ রোববার দিল্লি সফর শেষে দেশে ফিরলে হযরত শাহজালাল (রা.) আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের সামনের সড়কে জাতীয় পার্টির উদ্যোগে দেয়া সংর্বধনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
বিমানবন্দর সড়কের সামনে ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে উপস্থিত দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, আজকের জনসমাগমই প্রমাণ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টিই ক্ষমতায় আসবে।
তিনি বলেন, আপনারা আমাকে ভোট দিন, আমি আপনাদের সন্ত্রাস, বিবাদমুক্ত, শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ উপহার দেবো।
জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও সংর্বধনা অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপির সভাপতিত্বে এসময় আরো বক্তৃতা করেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টু। চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ও যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজুর পরিচালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ, সাহিদুর রহমান টেপা, প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সুনীল শুভ রায়, মীর আবদুস সবুর আসুদ, নাসরিন জাহান রত্না, মেজর (অব:) খালেদ আক্তার, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, যুগ্মমহাসচিব ইকবাল হোসেন রাজু, আরিফ খান, জহিরুল ইসলাম জহির, আলমগীর শিকদার লোটন, জহিরুল আলম রুবেল, ফখরুল ইসলাম সাহজাদা, বেলাল হোসেন, একেএম আশরাফুজ্জামান খান, ইসহাক ভূইয়া, সুজন দে, মিজানুর রহমান মিরু, গোলাম মোস্তফা আঙ্গুর, কামাল হোসেন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই পাঁচ দিনের ব্যাক্তিগত সফরে দিল্লি যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রোববার বিকেলে তিনি ঢাকায় ফেরেন। তার সাথে ছিলেন পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) মো. খালেদ আখতার।
সফরকালে এরশাদ আজমির শরিফে হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর (রহ.) পবিত্র মাজার জিয়ারত করা ছাড়াও বিজেপি সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে বৈঠক করেন।
পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদকে বিমান বন্দরে সম্বর্ধনায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে দলের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী বিমান বন্দরে উপস্থিত হন।
সংবর্ধনা উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং উত্তরের বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নিতে থাকেন। ঢাকার পার্শ্ববতী বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। বিকেল থেকেই ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের নির্বাচনী এলাকা দোহার এবং নবাবগঞ্জ, ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুর ও কদমতলি থেকে দু’টি বিশাল মিছিল বিমানবন্দর সড়কে অবস্থান নেয়। এছাড়া ঢাকা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, সোনারগাঁওয়ের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক পার্টি, আলমগীর শিকদার লোটনের নেতৃত্বে যুবসংহতি, একেএম আসরাফুজ্জামান খানের নেতৃত্বে শ্রমিক পার্টি, সৈয়দ আহতেখার আহসান হাসানের নেতৃত্বে জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতা-কর্মীরা গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এছাড়াও সেকেন্দার আলী মনির নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বিএনএ গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এসময় পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়।
এরশাদ তার বক্তৃতায় বলেন, এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে জাতীয় পার্টি ক্ষমতার জন্য প্রস্তুত। জাতীয় পার্টি বর্তমানে অনেক শক্তিশালী দল। জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে একমাত্র উদার গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলে, আবার আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলে। তাই দেশবাসী দু’টি দলের কোনোটিকেই আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।
রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমাদের সফর সফল হয়েছে। দিল্লিতে আমাদের সাথে অনেকেরই কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে জাতীয় পার্টি দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তি।
সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, দিল্লী সফরকে আগামী জাতীয় রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেই এ সংর্বধনা দেয়া হয়েছে। ভারতের একটি ভূমিকা আমাদের নির্বাচনে থাকে বলে দেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post