অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই বিরোধীদল তথা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদেরকে বাসা-বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেই আর ফিরে আসছে না। নিখোঁজদের পরিবারের অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনই তাদেরকে তুলে নিয়ে গেছে। তবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ বার বারই অস্বীকার করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও একাধিকবার বলেছেন গুম বলতে কোনো শব্দ নেই। দেশে কোনো গুমের ঘটনা ঘটেনি। রাজনীতিতেও এনিয়ে চলে আসছে তর্ক বিতর্ক। সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও বিএনপি-জামায়াত বলছে সরকারই তাদের নেতাকর্মীদেরকে গুম-অপহরণ ও হত্যা করছে।
অন্যদিকে গুমের শিকার অনেককেই পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, যাদেরকে সাদা পোশাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো বলে গুমের সময় পরিবার দাবি করেছিলো। এরকম বেশ কিছু ঘটনার কারনে গুমের পিছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত হওয়ার ব্যপারটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের গুম-খুন নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একটি বিবৃতি দেয়ার পরই এনিয়ে আবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতও এনিয়ে আবার সোচ্চার হয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির কতো নেতা-কর্মী ‘গুম’ বা খুন হয়েছে তার তালিকা চেয়েছেন।
এরপর ১১ জুলাই বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা শহরে গুম হওয়া নেতাকর্মীদের নাম প্রকাশ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির দাবি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কেবল ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থান ও আশপাশের জেলা থেকে ‘অন্তত ৫০ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়। যাদের কেউই আজ অব্দি ফিরে আসেনি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৩ সাল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত মোট ৪৩৫ জন ব্যক্তি ‘গুম’ হয়েছেন বলে দাবি করেন রিজভী আহমেদ।
অপরদিকে, বিএনপির গুম হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ আজ বলেছেন গুমের যে তালিকা বিএনপি প্রকাশ করেছে, তাদের অনেকেই স্ব-ইচ্ছায় নিখোঁজ। অনেকেই বিভিন্ন মামলার কারণে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামালও বলেছেন যাদেরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তারা স্বেচ্ছায় নিখোঁজ। সরকারের কোনো বাহিনী তাদেরকে গুম করেনি।
তবে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও হাছান মাহমুদের বক্তব্য মানতে নারাজ রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ। তাদের মতে, নিখোঁজ ব্যক্তিরা যদি কোথাও লুকিয়ে থাকে , তাহলে তাদেরকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যদি তাদেরকে গুম না করে থাকে তাহলে, সরকার তাদেরকে বের করে এনে প্রমাণ করুক যে তাদেরকে গুম করা হয়নি। কারণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কোনো ব্যক্তির পক্ষে লুকিয়ে থাকা সম্ভব নয়।
Discussion about this post