অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিশিষ্ট কবি, কলামিস্ট, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহারের অপহরণের ঘটনার রহস্যের কোনো জট খুলছে না। বরং এনিয়ে সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের বিপরীতমুখি বক্তব্যে রহস্য আরও ঘনিভূত হচ্ছে। আর ফরহাদ মজহারের অপহরণকারীদের সনাক্ত করতে যেসব বিষয় সহযোগিতা করবে বলে মনে করা হচ্ছিলো, সেগুলোও এখন গায়েব হয়ে গেছে। এসব কারণে ফরহাদ মজহারের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হতে পারে বলেও মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ।
শুক্রবার ময়মনসিংহে একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশে-বিদেশে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতেই ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে এধরণের ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য অনুযায়ী সরকারের অজান্তেই অপহরণকারীরা এঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। তাহলে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করেছিল? সেটা সম্ভব না। কারণ, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা নিজেরাই এখন প্রতিনিয়ত র্যাব-পুলিশের দ্বারা গুম-অপহরণ ও গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে। যারা নিজেরাই পরিবারের সঙ্গে বাসা-বাড়িতে ঘুমাতে পারছে না, তাদের পক্ষে এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব না।
তাহলে টাকার জন্য অপহরণকারী চক্র ফরহাদ মজহারকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল? সেটাও দেশবাসীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। কারণ, টাকার জন্য যারা অপহরণ করে তাদের কাজের ধরণই আলাদা। তারা শিশু ও স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও বড় লোকের ছেলেদেরকে তুলে নিয়ে টাকার জন্য আটকে রেখে। কিন্তু, ফরহাদ মজহারের মতো এত বড় মাপের একজন বুদ্ধিজীবীকে তুলে নেয়ার চিন্তাও করবে না তারা। আর পেশাদার অপহরণকারীরা করে থাকলেও সেদিনই তারা ধরা পড়ে যেতো। কারণ, অপরাধী সনাক্তে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খুবই দক্ষ। এমনকি কারা এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের কাছে এদের নামের তালিকাও আছে।
বলা যায়, ফরহাদ মজহারের মতো ব্যক্তিকে বাসার গেট থেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই রাখে। আর মানুষের সন্দেহও তাদের প্রতিই।
এদিকে, ফরহাদ মজহারকে অপহরণের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক। তিনি আজ বলেছেন, ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে মনে হয় না। তার এ বক্তব্য নিয়ে সর্বমহলে চলছে সমালোচনা। মানুষের মধ্যে নানান শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেদিন রাতে খুলনার ডিআইজি যে বক্তব্য দিয়েছিল যে ফরহাদ মজহার স্বেচ্ছায় ভ্রমণে বের হয়েছিলেন, সেই কথাকেই পুলিশের আইজিপি প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। তিনি আজ বলেছেন অপহরণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দুই দিন পর বলবেন ফরহাদ মজহার নিজেই গিয়েছিলেন।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ফরহাদ মজহারকে যদি অপহরণ করা না হয়ে থাকে, তাহলে খুলনার সেই গ্রীল হাউজের সিসি ক্যামেরাটা গেলো কোথায়? যেখানে বসে দুইজন লোক হোটেল বয়কে বলেছিল, উনি দেশের বড় মাপের বুদ্ধিজীবী। ঐ সিসি ক্যামেরাটা কারা খুলে নিয়েছে? তারপর হোটেল থেকে বেরিয়ে ফরহাদ মজহার যে পথে হেটে বাস কাউন্টারে গিয়েছিলেন সেই পথেও সিসি ক্যামেরা ছিল। এসব সিসি ক্যামেরা এখন নাই কেন? আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া এসব সিসি ক্যামেরা খুলে নেয়ার এত সাহস কার? পুলিশ প্রধান অপহরণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলেও মনে করছেন তারা।
Discussion about this post