অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার সময় আজ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের গাড়িবহরে লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, রামদা এবং পাথর দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।
এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। এসময় বহরের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
হামলার শিকার হয়ে মির্জা ফখরুল চট্টগ্রাম ফিরে যান এবং সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘আমরা রাঙ্গুনিয়া থানা পার হয়ে গেছি। রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী বাজারে যেতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ করে আমরা দেখলাম ৩০-৪০ যুবক লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, রামদা এবং পাথর নিয়ে আমাদের গাড়ি আক্রমণ করল। তারা অনবরত হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলে। শামীমের (কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান) মাথায় আঘাত করে। তাঁর মাথা ফুলে গেছে। আমীর খসরু সাহেবের হাত রক্তাক্ত হয়েছে। রুহুল আলম চৌধুরী সাহেবের ঘাড়ে আঘাত লেগেছে। আমিও আঘাত পেয়েছি।’
এ হামলার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা ও ওই এলাকার সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদের সমর্থকদের দায়ী করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। হামলার সময় দুর্বৃত্তরা জয় বাংলা স্লোগান দেয় বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এ নেতা।
আমীর খসরু বলেন, ‘এখানে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, এটা অবিশ্বাস্য। আমরা রাঙামাটির কাপ্তাই হয়ে ভোটঘরে রিলিফ দিতে যাচ্ছি। এটা সবাই জানে। ৫০ থেকে ৬০ জন লোক লাঠিসোটা, রড, ছুরি, ধামা, রামদা নিয়ে… কীভাবে যে পাথর মারছে আর গাড়ি ভাঙছে…। আমরা যে কীভাবে জীবন নিয়ে বের হয়ে আসছি, জীবন নিয়ে যেতে পারব, এটা বিশ্বাস করি নাই। এ ধরনের আক্রমণ আমার জীবনে দেখি নাই।’
এদিকে এই হামলার সাথে ঐ এলাকার সংসদ সদস্য হাসান মাহমুদের সমর্থক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া গেছে। রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহেদুল ইসলাম তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জড়ো হওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কয়েকটি ছবি পোষ্ট করে বলেছেন, “আজ সকাল থেকে ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাণীরহাট এলাকায়…। কারন আমরা বলেছিলাম দেশবিরোধী পেট্রোল বোমাবাজদের রাঙ্গুনীয়ার মাটিতে পা রাখতে দেবনা… মাঠে থাকবে ছাত্রলীগ…।”
এই রাঙ্গুণীয়াতেই আজ সকাল ১০টায় জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে বিএনপি মহাসচিবের গাড়ি বহরে লাঠিসোটা, রড, ছুরি, ধামা, রামদা দিয়ে হামলা চালানো হয়। ছাত্রলীগ নেতার এই ফেসবুক পোষ্ট থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে তারাই হামলা চালিয়েছে। ছাত্রলীগ নেতার এই ফেসবুক পোস্টে অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে ধন্যবাদ জানাতেও দেখা গেছে।
ছাত্রলীগের এই নেতার ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে দেখা গেছে তার কাভার ফটোতে হাসান মাহমুদের ছবি দেয়া আছে এবং ছাত্রলীগে তার পদ পদবীও সেখানে দেয়া আছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মির্জা ফখরুলের উপর এমন ঘৃণ্য হামলাকে অন্যায় বলে অভিহিত করলেও যার এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটেছে সেই এলাকার সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এই ঘটনাকে বিএনপির ‘পলিটিক্যাল ইস্যু তৈরির চেষ্টা’ বলে মন্তব্য করেছেন।
হাসান মাহমুদ এটাকে পথচারীদের হামলা বলে অভিহিত করে বলেছেন, বিএনপি নেতাদের গাড়িবহর দুজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়, তাদের গাড়িবহরের চাপায় দুইজন পথচারী আহত হন। এরপর সেখানে উত্তেজিত লোকজন কিছু একটা করেছে।’
হাসান মাহমুদের এমন অসত্য মন্তব্যে অনেকেই অবাক হয়েছেন। কারন এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই সেটি মিডিয়াতে আসতো। ছাত্রলীগ নেতার উদ্ধৃত ফেসবুক পোষ্টের মাধ্যমেই জানা যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই রাস্তায় অবস্থান করতেছিলো। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যখন গাড়িবহরে সসস্ত্র হামলা চালায় তখন হামলা থেকে রক্ষা পেতে গাড়ি দ্রুত চালানোয় গাড়িতে লেগে হামলাকারী ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মীও আহত হয়। মূলত তাদেরকেই হাসান মাহমুদ পথচারী বলে দাবি করেছেন। হাসান মাহমুদ ছাত্রলীগের সেই আহত নেতাকর্মীদের দেখতে হাসপাতালেও ছুটে যান। যা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফেসবুক পোষ্টের মাধ্যমে জানা যায়।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাই স্বীকার করছে তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের রাঙ্গুনীয়ার মাটিতে পা রাখতে দিবে না। সকাল থেকে তরা রাজপথে অবস্থানও করেছেন গাড়িবহরে হামলা চালাতে। আর একটি দলের মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলা চালাতে তারা রাস্তায় অবস্থান করছে এবং তাদের নেতা তথা তাদের সাংসদ হাসান মাহমুদ সেই বিষয়ে অবগত থাকবেন না এটা কখনোই হতে পারে না। সাংসদের ইন্ধন ছাড়া এমন সাহস কখনোই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা করতো না। হাসান মাহমুদ অবশ্যই এই বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং এই ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতেই তিনি বানোয়াট একটি ঘটনার সূত্রপাত করেছেন।
বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মতে হাসান মাহমুদের ইন্ধনেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, রড, ছুরি, ধামা, রামদা ও পাথর দিয়ে বিএনপি মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে এবং পাহাড় ধসে দুর্গতদের জন্য নেয়া ত্রাণ লুটপাট করেছে। সাংসদের ইন্ধন ছাড়া একটি দলের মহাসচিবের উপর হামলার সাহস ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কখনোই হতো না। একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিকের উপর এমন হামলার নিন্দা ও এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন তারা।
Discussion about this post