রাঙামাটি যাওয়ার পথে আক্রমণের ঘটনা দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। আমাদের পর্যায়ে যদি এই আক্রমণ হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী, সেটা আপনারা (সাংবাদিক) বুঝে নিন।’
আজ রোববার বেলা পৌনে একটায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল এ মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী ও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রাম বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
রাঙামাটি যাওয়ার পথে আজ সকাল ১০টায় রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী এলাকায় মির্জা ফখরুলের গাড়িবহর হামলার শিকার হয়। এরপর তিনি রাঙামাটি না গিয়ে চট্টগ্রামে ফিরে এসে সংবাদ ব্রিফিং করেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা রাঙ্গুনিয়া থানা পার হয়ে গেছি। রাঙ্গুনিয়ার ইছাখালী বাজারে যেতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। হঠাৎ করে আমরা দেখলাম ৩০-৪০ যুবক লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, রামদা এবং পাথর নিয়ে আমাদের গাড়ি আক্রমণ করল। তারা অনবরত হকিস্টিক ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলে। শামীমের (কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান) মাথায় আঘাত করে। তাঁর মাথা ফুলে গেছে। আমীর খসরু সাহেবের হাত রক্তাক্ত হয়েছে। রুহুল আলম চৌধুরী সাহেবের ঘাড়ে আঘাত লেগেছে। আমিও আঘাত পেয়েছি।’
কার কী আঘাত লেগেছে, ব্যক্তিগতভাবে সেটা বড় কথা নয় উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই আঘাত গণতন্ত্রের প্রতি, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মুক্তচিন্তা যাঁরা করেন, যাঁরা এই সরকারের খারাপ কাজগুলোর বিরোধিতা করেন এবং গণতন্ত্রের প্রতি সোচ্চার হন তাঁদের প্রতি। এ আঘাত জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ওপর। এই আঘাতের পর আজকে আওয়ামী লীগের চরিত্র আরও বেশি উন্মোচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রের কথা বলে। কিন্তু তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সহনশীলতা বলতে তাদের মধ্যে কোনো কিছু নেই।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো সেখানে কোনো জনসভা করতে যাচ্ছিলাম না। দুর্গত এবং যারা নিহত হয়েছেন, সেসব পরিবারকে সাহায্য করতে আমরা পার্টির পক্ষে সেখানে যাচ্ছিলাম। সেই পথে এভাবে আক্রমণ, এটা আমাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। আমাদের পর্যায়ে যদি আক্রমণ হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী, সেটা আপনারা বুঝে নিন। গোটা দেশে এ অবস্থা চলছে সুস্থ চিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির ওপর। এটা একটা ভয়াবহ ঘটনা। এটার প্রতিবাদ সেভাবে হবে, যখন আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যে ভাষায় কথা বলেন, গতকাল তিনি অনেক কথা বলেছেন। তাঁরা আমাদের কোনো স্পেস (সুযোগ) দিচ্ছেন না। রাঙামাটিতে ১৫৬ জন মারা গেছেন। এটা সরকারের হিসাব। আওয়ামী লীগের উচিত ছিল জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা। এত মানুষ মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বিদেশে চলে গেলেন। জনগণের প্রতি মায়ামমতা ও জবাবদিহি নেই তাঁদের।’
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করেছে। আর রাঙ্গুনিয়ার এমপির (হাছান মাহমুদ) ইন্ধন আছে কি না, সেটা আপনারা তদন্ত করে দেখবেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘কোনো সভ্য দেশে এবং সভ্য জাতির পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। একদিকে দেশ ও জাতি তাদের সব রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, আপনি দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবেন না। ত্রাণ দিতে পারবেন না। দেশ আজ সেই পর্যায়ে এসেছে। একটি দলের মহাসচিব এবং তাঁর সঙ্গে আমরা যারা সিনিয়র নেতা ছিলাম, কেউ রক্ষা পাইনি। এরপর বাকি থাকল কী? তারা আর কী চায়? দেশ-জাতি যেভাবে অধিকার হারিয়েছে একটার পর একটা। এরপর হারানোর কিছু নেই। আমার মনে হয়, সময় এসেছে ফ্যাসিস্ট, সন্ত্রাসী এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে যারা আছে, তাদের সরাতে হবে।’
আমীর খসরু সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্ব পর্যায়ে যে আক্রমণের শিকার হয়েছে, সেটা কোথা থেকে আসতে পারে তা আপনারা (সাংবাদিক) ভালো করে বুঝে নিন।’
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post