নিখোঁজ হওয়ার ৪৯ দিন পর বাড়ি ফিরেছেন ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক ও মাদরাসা ছাওতুল হেরা’র শিক্ষক মাওলানা শহীদুল্লাহ সরকার। বুধবার ইফতারের পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে রাজধানীর খিলক্ষেতে চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে রেখে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তিনি একটি বাসে চড়ে রাত তিনটার দিকে ময়মনসিংহের বাসায় ফিরেন।
খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সা’দী, ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মুহিববুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মঞ্জুরুল হকসহ নেতৃবৃন্দ তার বাসায় ছুটে যান এবং তার সাথে কুশল বিনিময় করেন।
এসময় আলাপকালে মাওলানা শহিদুল্লাহ সরকার নেতৃবৃন্দকে জানান, গত ২৫ এপ্রিল ডিবি পুলিশের পরিচয়ে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে চার দিন এক জায়গায় রাখা হয়। সেখানে তাকে তেমন কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। মারধর বা অশোভন আচরণও করা হয়নি। চার দিন পর চোখ বেঁধে একটি ছোট্ট কামরায় হ্যান্ডক্যাফ পড়ানো অবস্থায় রাখা হতো। স্বাভাবিক খাবার দেয়া হতো। তবে ছেড়ে দেয়ার আগে খুব ভালো ইফতার খাইয়েছে। যা খেয়ে তার পেট খারাপ হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
মাওলানা শহিদুল্লাহ সরকার আরো জানান, বুধবার ইফতারের পর তাকে একটি গাড়িতে তোলা হয়। বলা হয়, ‘খোঁজখবর নিয়েছি, তুমি কোনো কিছুর সাথে জড়িত না। তাই ছেড়ে দিচ্ছি।’
বেশ কিছু সময় পর গাড়ি থামিয়ে তাকে নামানো হয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় রাস্তার কিনারায় নিয়ে প্রস্রাব করার ভান করে বসতে বলে। এরপর দুই হাজার টাকা হাতে দিয়ে বলে, ‘সামনে খিলক্ষেত। বাসে উঠে বাড়ি চলে যাও।’
এসময় তার মোবাইল ফোনটি রেখে দেয়া হয় বলেও জানান তিনি। এরপর তিনি খুব ক্লান্ত হয়ে রাস্তার ধারে বসে থাকাবস্থায় মাদরাসা দু’জন ছাত্র তাকে সেখান থেকে খিলক্ষেত নিয়ে একটি বাসে উঠিয়ে দেয়। বাসের এক যাত্রীর মোবাইল থেকে স্ত্রীকে ফোন করে নিজেকে মুক্ত হওয়ার কথা জানান। শেরপুরগামী বাসটি রাত তিনটার দিকে ময়মনসিংহ শহরের পাটগোদাম ব্রিজের মোড়ে এসে থামলে স্বজনরা তাকে বাসায় নিয়ে যান।
মাওলানা শহিদুল্লাহ সরকারের স্ত্রী শাহনাজ পারভীন নয়া দিগন্তকে জানান, ‘আমার স্বামীকে জীবিত পেয়েছি। এজন্য আমি ও আমার পরিবার আনন্দে আত্মহারা। মহান আল্লাহপাকের কাছে শোকরিয়া আদায় করছি।’ তিনি বলেন, ‘বুধবার রাত ১২টার দিকে আমার মোবাইলে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনটি রিসিভ করতেই বলে, শাহনাজ- আমি জীবিত। আপনি কে জানতে চাইলে বলে, ভুলে গেছো। আমি তোমার স্বামী। তখনো বিশ্বাস হয়নি যে আমার স্বামী তিনি। আমি সন্তানদের ডেকে সুখবর দেই আর সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর আমার দুই ভাইকে পাঠাই তাকে বাসায় নিয়ে আসতে।’
তিনি আরো জানান, তার (মাওলানা শহিদুল্লাহ সরকার) শরীর খুব দুর্বল। কথা বলতেও কষ্ট হয়। তাকে নিয়ে এখন গ্রামের বাড়ি গৌরিপুর উপজেলার বালিয়াপাড়ায় রয়েছেন। এতদিন কোথায় কীভাবে ছিলেন এসব ব্যাপারে কোনো কথা হয়েছে কীনা জানতে চাইতে শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘সুস্থ্য হলে জানতে চাইবো।’
তবে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে কোতোয়ালী মডেল থানার এসআই ও নিখোঁজ জিডি’র তদন্তকারি কর্মকর্তা উজ্জল মন্ডল সরকার ফোন করে জানতে চেয়েছেন তিনি (মাওলানা শহিদুল্লাহ সরকার) বাড়ি ফিরেছেন কিনা? এব্যাপারে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়েছি, তিনি বাড়ি ফিরেছেন। আমরা পরে তার সাথে কথা বলবো।
এর আগে মাওলানা শহিদুল্লাহ সরকারের সন্ধান চেয়ে পরিবারের পক্ষে ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ ময়মনসিংহে সাংবাদিক সম্মেলন করে। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার, জিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাত করে স্মারকলিপি দেয়।
উল্লেখ, গত ২৫ এপ্রিল দিবাগত রাত ২টার দিকে ২০/২৫ জনের একটি সশস্ত্র দল নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের লোক পরিচয় দিয়ে মাওলানা শহীদুল্লাহ সরকারকে শহরের খাগডহরস্থ তার নিজ বাসা উঠিয়ে নিয়ে যায়। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মাওলানা শহীদুল্লাহ’র মাকে সকালে ডিবি অফিসে খোঁজ নিতে বলে যায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে কেউ তার কোনো সন্ধান দিতে পারেনি।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post