অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাড়িটি অবশেষে সরকার নিয়েই গেছে। বিগত ৩৬ বছর ধরে বাড়িটিতে বসবাস করে আসছিলেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। ওই বাড়িটির সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি ও ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে। শত চেষ্টা করেও বাড়িটি তিনি রক্ষা করতে পারলেন না।
সর্বশেষ দুই দিন আগে উচ্চ আদালতে বাড়ি রক্ষায় মওদুদের করা রিভিউ খারিজ হওয়ার পর তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন বাড়িটি ছাড়বেন না। অপরদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন বাড়ি তাকে ছাড়তেই হবে। অবেশেষে আজ বুধবার ব্যারিস্টর মওদুদ আহমেদকে গুলশানের বহুল স্মৃতিজড়িত বাড়িটিকে ছাড়তেই হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) জোর করেই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
এদিকে, মওদুদকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কিছু লোক এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বেশির ভাগই সন্তোষ প্রকাশ করছেন। অনেকে এটা নিয়ে মশকরাও করছে। কেউ বলছে এটা মওদুদের কর্মের ফল। অতীতে তিনি যেমন কর্ম করেছেন, এখন তার ফল ভোগ করছেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একজন খ্যাতিমান আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ। তিনি এদেশের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। তবে, তিনি বহুল পরিচিত একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ হিসাবেও সর্ব মহলে পরিচিত। তিনি যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো রূপ ধারণ করতে পারেন। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত এমন কোনো সরকার নেই যাদের কাছ থেকে তিনি সুবিধা গ্রহণ করেন নি। রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে অনেকেই রহস্যজনক পুুরুষ হিসেবে মনে করে। এমনকি খোদ বিএনপিতেও তিনি একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি বিএনপি করলেও দলের নেতাকর্মীরা মনে করে সরকারের সঙ্গে তার গোপন আতাঁত রয়েছে। তার এই প্রশ্নবিদ্ধ ভুমিকার জন্য দলের চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও তাকে এখন আর বিশ্বাস করে না।
বিশেষ করে ক্যান্টনমেন্ট থেকে খালেদা জিয়ার বাড়ি ছাড়ার পেছনে মওদুদের হাত ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় মওদুদের ভুমিকাকে রহস্যজনক হিসেবেই মনে করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। মওদুদের কারণেই খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি ছাড়তে হয়েছে বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা এখনও মনে করে।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা বড় ধরণের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। কিন্তু, মওদুদ খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিয়েছিল যে, আদালতের মাধ্যমেই বাড়ি ফিরে পাওয়া যাবে। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলনে যাওয়ার দরকার নেই। এরপর আইনি প্রক্রিয়াতেও ব্যারিস্টার মওদুদ জোরালো ভুমিকা পালন করেননি বলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ। এসব কারণে মওদুদের গুলশানের বাড়িটি সরকার নিয়ে নেয়ার পর বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীই খুশী বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, ব্যারিস্টার মওদুদের কারণেই আজ বিএনপির এই দুর্দশা বলে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ। ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া শুধু মওদুদের পরামর্শ শোনার কারণেই কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে গন্ডগোল ও পরে ওয়ান ইলিভেনের সৃষ্টি হয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার কথা ছিল সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের সাহেবের। কারণ ২০০৭ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি হবেন সর্বশেষ বিদায়ী প্রধান বিচারপতি। তার পূর্বে বিদায় নেয়া প্রধান বিচারপতি কেএম হাসান বিএনপি ঘরোনার লোক এটা সবাই জানে। জিয়াউর রহমানের সময় তিনি বিএনপির একটি সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন। দলীয় এই বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান করার উদ্দেশ্যেই বিএনপি সরকার কৌশলে প্রধান বিচারপতির বয়স বৃদ্ধি করলেন। সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছের অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও আর হলো না। নতুন নিয়ম অনুযায়ী কে এম হাসানই হবেন কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান। কিন্তু নাছোড়বান্দা আওয়ামীলীগ। কে এম হাসানের অধীনে কোন নির্বাচনে তারা অংশ গ্রহণ করবে না। ২২ জানুয়ারীর সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয় রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ। ১১ জানুয়ারী কেয়ারটেকারের আড়ালে চলে আসে সেনাবাহিনীর শাসন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ অনেকেই মনে করেন তখনকার রাজনৈতিক সংঘাতের জন্য সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদই অনেকাংশে দায়ী। কারণ ব্যারিস্টার মওদুদের পরামর্শেই তখনকার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলীয় লোক সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান করার টার্গেট নিয়ে প্রধান বিচারপতির বয়স বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ব্যারিস্টার মওদুদ তখন বেগম জিয়াকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে কে এম হাসান কেয়ারটেকার প্রধান হলে ক্ষমতা আর হাত ছাড়া হবে না। কিন্তু ঘটনা সম্পুর্ণ হিতে বিপরীত হলো। সরলমনা বেগম জিয়া তখন ব্যারিস্টার মওদুদের কুটকৌশল আর চক্রান্ত ধরতে পারেন নি। জনপ্রিয় কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই যে ব্যারিস্টার মওদুদ এই ষড়যন্ত্র করেছিল বেগম জিয়া আদৌ তা অনুধাবন করতে পারেন নি।
জানা গেছে, পরবর্তীতে এনিয়ে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা মওদুদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেদিন যদি মওদুদের পরামর্শ না শোনতেন তাহলে বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে থাকতে হতো না বলেও মনে করেন বিএনপি নেতারা।
Discussion about this post