অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পূর্ব-দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশের উপকূলীয় ১৬ জেলার লাখ লাখ মানুষ। এই ঘূর্ণিঝড়টি সাগরে যেভাবে শক্তি সঞ্চয় করেছিল, যদি সরাসরি উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতো তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার সম্ভাবনা ছিল। তারপরও ক্ষয়ক্ষতি একেবারে কম হয়নি।
সরকারের দেয়া তথ্য মতেই, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’য় প্রাথমিক হিসাবে ২ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৫ জন মানুষ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। আর ৬ জন নিহত এবং ৬১ জন আহত হয়েছে। এতে ৩৯৫৯৯ টি ঘরবাড়ি আংশিক এবং ১৯৯২৯টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে যায়।
তবে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এমন কঠিন দুর্যোগের সময়েও উপকূলীয় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ পাশে পাচ্ছেন না দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকা মন্ত্রী-সচিবকে। এ দুর্যোগের সময় তারা অবস্থান করছেন বিদেশে। এমনকি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ডিজিও তাদের সঙ্গে বিদেশে অবস্থান করছেন।
জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সচিব শাহ কামাল ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেক্সিকোর কানকুনে অবস্থান করায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোসহ উদ্ধার কাজ সামাল দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি ও অনুসরণীয় আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও সচিব/ভারপ্রাপ্ত সচিবদের একসঙ্গে বিদেশভ্রমণ সাধারণভাবে পরিহার করতে হবে। জাতীয় স্বার্থে বিশেষ ক্ষেত্রে (যেমন বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর বার্ষিক সভা, দাতাগোষ্ঠীর সভা) একত্রে বিদেশভ্রমণ অপরিহার্য হলে অত্যন্ত সীমিত ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্রে এ ধরনের ভ্রমণ পরিহার করার কথা বলা হলেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ও সচিবের একসঙ্গে বিদেশ সফর নিয়ে এখন বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সরকারের ভেতরেই এনিয়ে এখন বড় ধরনের অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মানছেন না বলেও মনে করছেন অনেকে। তাদের মতে, এভাবে দল বেঁধে বিদেশ সফরে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার লঙ্ঘনের সামিল।
আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও গতকাল সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, এমনটা হওয়া উচিত নয়। এ ধরনের একটি অনুশাসন আছে। এই যে একটা দুর্যোগ… আরো বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো। এ সময়ে মন্ত্রী মহোদয় গেলে, সচিবের থাকা উচিত। খুব জরুরি কোনো বিষয় ছাড়া দুজনের একসঙ্গে যাওয়া উচিত নয়।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগেও অকালবন্যায় যখন হাওরের সব ধান তলিয়ে নিয়ে গেছে, তখন হাওর পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ৯ জনকে নিয়ে কানাডায় চলে গেলেন হাওরের ওপর দক্ষতা অর্জনের জন্য। সেটা নিয়েও তখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এখন আবার ঘূর্ণিঝড়ের দুর্যোগের সময় দুর্যোগ মন্ত্রী ও সচিব বিদেশে থাকায় এনিয়ে সাধারণ মানুষও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
Discussion about this post